গুজরাট রাজ্যের সুরাটের নিম্ন আদালতে মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীর দুই বছরের জেল হওয়ার পরের দিনেই কেরালার কংগ্রেসদলীয় সংসদ সদস্য রাহুলের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়। সময় নষ্ট না করে গত সোমবার লোকসভার হাউজিং কমিটি রাহুলকে সরকারি বাংলো ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ পাঠায়। নোটিশে বলা হয়, রীতি ও নিয়ম মেনে সাবেক সংসদ সদস্যকে এক মাসের মধ্যে সরকারি আবাস খালি করে দিতে হবে।
সরকারি চিঠি পাওয়ার পর কালক্ষেপণ না করে রাহুল উত্তর দেন। আজ মঙ্গলবার সকালেই সেই চিঠি পাঠিয়ে দেন লোকসভার সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তাকে। এতে ঠিক সময়ে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি লেখেন, ‘গত চার মেয়াদের সংসদ সদস্য হিসেবে জনগণের যে সমর্থন আমি পেয়েছি, সেটাই আমার এখানে বসবাসের সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে।’ রাহুল প্রথমবার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন ২০০৪ সালে।
নিয়ম অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদ চলে গেলে এক মাসের মধ্যে সরকারি আবাস ছেড়ে দিতে হলেও বহু ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম রয়েছে। নিয়মমতো, এক মাস সময় কাটার পর সাবেক সংসদ সদস্য বাজার চলতি ভাড়ায় কিছুদিন থাকার অনুমতি চাইতে পারেন। সংসদের হাউজিং কমিটি চাইলে অনুমতি দিতে পারেন। না চাইলে গৃহচ্যুতও করতে পারেন। অটল বিহারি বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভার বিজেপি সদস্য সাবেক অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশোবন্ত সিং আমৃত্যু সরকারি বাংলোয় ছিলেন। সেই অনুমতি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল।
সংসদ সদস্য পদ চলে যাওয়ার পর সাবেক মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানও বাজার চলতি ভাড়ায় সরকারি বাসভবনে দীর্ঘকাল ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে চিরাগ পাসোয়ানকে সেই বাংলো থেকে জবরদস্তি বের করে দেওয়া হয়েছিল। জবরদস্তি সরকারি বাংলো বা আবাস খালি করার ঘটনা কম নয়। মোদ্দাকথা, কাকে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে, কাকে নয়, অনুমতি কোন শর্তে, তা সম্পূর্ণ সরকারের মর্জির ওপর নির্ভরশীল। কার সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক কী রকম, এ ক্ষেত্রে সেটাই প্রধান বিবেচ্য।
গুলাম নবী আজাদের ক্ষেত্রে তেমনই হয়েছে। কংগ্রেসে থাকাকালে তাঁর রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। তখন তিনি বিক্ষুব্ধ ‘জি ২৩’ গোষ্ঠীর প্রধান। যেকোনো সময় কংগ্রেস ছেড়ে দেবেন, এমন সম্ভাবনা অনেক দিন জিইয়ে ছিল। রাজনৈতিক কারণেই তাই তাঁকে ঠাঁই নাড়া করতে চায়নি শাসক বিজেপি। রাজ্যসভায় তাঁর বিদায়ী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেঁদে ফেলেছিলেন।
সেই আজাদ পরবর্তীকালে কংগ্রেস ছেড়ে জম্মু-কাশ্মীরে নিজের দল তৈরি করেন। কাশ্মীরি রাজনীতিতে সরকারের পক্ষ নেন। কেন তাঁকে ৫ সাউথ অ্যাভিনিউ লেনের বাংলো আজও ছাড়তে বলা হয়নি কিংবা কীভাবে ওই বাংলো এখনো দিল্লিতে তাঁর ঠিকানা, কেন সেই বাড়ির সামনে পুলিশি প্রহরা বহাল থাকে, সরকার তা জানায়নি। রাহুল গান্ধীর সদস্য পদ যেভাবে কাড়া হয়েছে, আজাদ তার সমালোচনা করেছেন। এখন দেখার, সরকারি বাংলো তাঁকে ছাড়তে হয় কি না।
যেভাবে রাহুল গান্ধীকে সাজা শোনানো হলো, যে গতিতে শুনানি, রায় ও তা কার্যকর করা হলো, কংগ্রেস নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের মতে তা ‘উসাইন বোল্টের গতিকেও হার মানিয়েছে’। সরকারের এ মনোভাব শাসক দলের ‘গান্ধী-বিদ্বেষেরই’ পরিচয় বলে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা মনে করছে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, নিয়ম মেনে এক মাসের মধ্যে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ তারই আরেক বহিঃপ্রকাশ।