রাষ্ট্র নয়, বেসরকারি খাত হবে উন্নয়নের চালিকা শক্তি: ডেভিড এঙ্গারম্যান

0
21
আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড সি এঙ্গারম্যান বক্তব্য রাখছেন

বিভিন্ন দাতা রাষ্ট্রের সহায়তায় সরকারিভাবে উন্নয়নকাজের যুগ এখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এর পরিবর্তে একটি নতুন উন্নয়ন অর্থায়নের যুগ তৈরি হচ্ছে, যেখানে উন্নয়নের জন্য দান বা সহায়তা হিসেবে নয়, বরং ঋণ হিসেবে অর্থ আসবে বা নেওয়া হবে। আর রাষ্ট্র নয়, বেসরকারি খাত হবে উন্নয়নের চালিকা শক্তি।

আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড সি এঙ্গারম্যান। সেমিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি যৌথ উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক উন্নয়ন: অতীত, বর্তমান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ।

সেমিনারে ডেভিড সি এঙ্গারম্যান বলেন, প্রচলিত দাতা অর্থায়নের মাধ্যমে উন্নয়ন যুগ এখন সমাপ্তির পথে। এটি প্রায় ৭০ বছর স্থায়ী ছিল; ১৯৫৫ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত, যা শীতল যুদ্ধের চেয়ে দীর্ঘ। ফলে উন্নয়নকে প্রাপক ও দাতা নয়, বরং ঋণগ্রহীতা ও ঋণদাতা সম্পর্কের ভিত্তিতে ভাবা উচিত। এত দিন বিশ্বব্যাংকসহ আঞ্চলিক বিভিন্ন সংস্থাগুলো ব্যাংকঋণ দিয়ে আসছিল। এখন সেই ভূমিকা নিচ্ছে বেসরকারি খাত। বিশেষ করে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’–এর মতো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে।

তবে ‘উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা’ টিকে থাকবে, এমন উল্লেখ করে ডেভিড এঙ্গারম্যান বলেন, ‘এই আকাঙ্ক্ষা শুধু পশ্চিমা ব্যাংক বা সংস্থার মধ্যে নয়, বরং গ্লোবাল সাউথ বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর নিজেদের ভেতরও তৈরি হয়েছে। এখন আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করছি, যেখানে প্রধান শক্তি হলো বেসরকারি বাজার ও বেসরকারি অর্থায়ন। ফলে অর্থায়নের জন্য উন্নয়নশীল দেশের নিজেদের বেসরকারি কোম্পানি, সাহায্য সংস্থা (এনজিও) ও সামাজিক ব্যবসার গুরুত্ব বাড়ছে।

দুর্নীতি উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে

অনুষ্ঠানে ডেভিড এঙ্গারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতি উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে, এই মন্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। বড় সরকারি চুক্তি ও ক্রয়প্রক্রিয়া সরকারের অভ্যন্তরে দুর্নীতির সহজ সুযোগ তৈরি করে। বেসরকারি খাতও যে সব সময় নিখুঁতভাবে অর্থের ব্যবস্থাপনা করে, বিষয়টি এমন নয়। আমার ধারণা, এই নতুন ও অধিকতর বেসরকারিকেন্দ্রিক উন্নয়নব্যবস্থায়ও দুর্নীতি সম্পূর্ণ বিলীন হবে না।’

প্রযুক্তিগত পরিবর্তন মানব উন্নয়নে যেমন অগ্রগতি আনতে পারে, তেমনি তা মানব উন্নয়নের ক্ষতিও করতে পারে বলে মনে করেন ডেভিড সি এঙ্গারম্যান। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দেশে দেশে কিংবা দেশের অভ্যন্তরে মানুষের ভেতর বৈষম্য বাড়ানোর বড় একটি ঝুঁকি তৈরি করছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সেগুলো জাতীয়করণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে ডেভিড সি এঙ্গারম্যান বলেন, জাতীয়করণ একটি জটিল ও কঠিন বিষয়। স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তানের বহু প্রতিষ্ঠান ও কারখানা পশ্চিম পাকিস্তানি মালিকেরা ফেলে রেখে গিয়েছিলেন। সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রই তখন একমাত্র প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়ায়। এটি কোনো আদর্শগত (সমাজতান্ত্রিক) বিষয় ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি ও অদক্ষ লোকের কারণে রাষ্ট্র–পরিচালিত এসব প্রতিষ্ঠান সফলতা পায়নি।

অর্থনীতি সমিতির অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসন মাসুদা ইয়াসমীন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক কাজী ইকবাল প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.