পরীক্ষা শুরু হবে বিকেল সাড়ে ৩টায়। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে সকাল ৬টায় ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেন ১২৫ ভর্তিচ্ছু। কিন্তু শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে এ ট্রেন ঢাকা থেকে ছাড়তে দেরি হয়। হিসাব করে দেখা যায়, যে ট্রেন রাজশাহীতে পৌঁছানোর কথা বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে, তা পৌঁছাবে দুপুর ৩টায়। কিন্তু বিধি বাম! মাঝপথে ট্রেনের ইঞ্জিন হয়ে যায় বিকল। ট্রেনে থাকা শিক্ষার্থীরা ধরেই নিয়েছিলেন আর হয়তো তাদের পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে না! কিন্তু পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপকের কারণে পরীক্ষায় শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণের সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষার ‘সি’ ইউনিটের চতুর্থ শিফটের পরীক্ষার্থীরা এমন পরিস্থিতিতে পড়েন। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বিষয়টির বিস্তারিত তুলে ধরেন তার নিজের ফেসবুক পেজে।
তিনি ফেসবুক পেজে এক পোস্টে উল্লেখ করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এটাকে পরীক্ষা না বলে ভর্তি যুদ্ধ বলা যেতে পারে। প্রায় ৭০০ ছাত্র-ছাত্রী আজকে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা থেকে এসে বিকেল সাড়ে তিনটার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। রেল ব্রোকেনের জন্য ধূমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকা থেকেই বিলম্বে রওনা হয়। সকাল ১১টায় হিসাব করে দেখা গেল ট্রেনটি বিকেল ৩টা নাগাদ রাজশাহী পৌঁছাবে।
অসীম কুমার তালুকদার লিখেছেন, পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ট্রেনটি অন্য ট্রেনকে বসিয়ে দিয়ে এগিয়ে আনছিলাম। ভাগ্য এতই খারাপ, লাহেড়ী মোহনপুর স্টেশনে এসে ধূমকেতুর ইঞ্জিন ফেইল করে, চাকা ঘুরছে না। কি করা যায়, কি করা যায় পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শরৎনগরে বসা চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন কেটে এনে ধূমকেতু আবার চালু করলাম। হিসেবে করে দেখলাম ট্রেনটি বিকেল ৪টায় রাজশাহী পৌঁছাবে, তখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।
তিনি আরও লিখেছেন, তখন ভিসি মহোদয়কে পরীক্ষার সময় পেছানোর বিনীত অনুরোধ করলাম। তিনি আমাকে প্রায় ৪ বার ফোন করে ট্রেনের খবর নিলেন। ট্রেন সর্বোচ্চ অনুমোদিত গতিতে চলছে। দুশ্চিন্তা ছাড়ছে না। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপায়ন্ত না দেখে আড়ানী স্টেশনের স্টপেজে ট্রেন না থামিয়ে থ্রু পাশ করলাম।
অসীম তালুকদার ওই পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, ঈশ্বরকে খুব একটা ডাকি না, পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে জোড়ে জোড়ে ডাকা শুরু করলাম, একটু মানতও করলাম। ঈশ্বর মনে হয় সদয় হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে দিলাম, তখন বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিট। দৌড়ে দৌড়ে হলে ঢুকতে হবে ৪টার মধ্যে।
তিনি আরও লিখেছেন, ভিসি মহোদয়কে বিনীত অনুরোধ করলাম ছেলে মেয়েদের হলে ঢোকার সুযোগ দেওয়ার জন্য। তিনি কথা রাখলেন এবং রেলওয়ের সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন। ট্রেন পরিচালনায় পাকশী কন্ট্রোলে সার্বক্ষণিক ভাবে মনিটরিং করেন ডিআরএম (পাকশী)। এখন নিজেকে বেশ হালকা লাগছে।
এ বিষয়ে মহাব্যবস্থাপকের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অসীম কুমার বলেন, গতবছর আমার ছেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। একজন বাবা হিসেবে আমি বুঝতে পারি সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার উদ্বেগ। ট্রেনটি ঢাকা থেকে যাত্রা করার সময় থেকে আমি অনুসরণ করেছি। কিন্তু ভাগ্যের বিড়ম্বনায় আমরা বারবার বিপদে পড়ি। পথে ইঞ্জিন নষ্ট হয়েছিল। অন্য একটি ট্রেনের ইঞ্জিন লাগিয়ে পুনরায় ধূমকেতু এক্সপ্রেস চালানো হয়। বিভিন্ন ক্রসিং এ আমরা ট্রেন থামাইনি, যাতে দ্রুত সময়ে তা গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়। আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াসের ফলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। একজন শিক্ষার্থীও যদি ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান, তাহলে আমাদের এ প্রচেষ্টা সার্থক হবে।
এ বিষয়ে বুধবার ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক প্রেস বিফ্রিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, দুর্ভোগ কাউকে বলে আসে না। ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ায় ঠিক সময়ে ট্রেনটি আসতে পারেনি। ওই ট্রেনে মঙ্গলবারের ‘সি’ ইউনিটের চতুর্থ শিফটের ১২৫ জনের মতো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ছিল। পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট পর পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে মানবিক বিবেচনায় তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।