রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সহ-উপাচার্যকে আটকে বিক্ষোভ, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি

0
24
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবন প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার বিকেলে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে এ ঘটনা ঘটে।

বিকেল চারটার দিকে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা জুবেরী ভবনে ঢুকতে চাইলে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারসহ শিক্ষার্থীরা তাঁদের সামনে দু-হাত প্রসারিত করে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

এরপর সহ-উপাচার্যসহ কর্মকর্তারা জুবেরী ভবনের দোতলায় একটি কক্ষে যান। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবনের সিঁড়ি ও বারান্দায় অবস্থান নিয়ে সহ-উপাচার্যকে আটকে রেখে বিক্ষোভ করছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে নিযুক্ত সহ-উপাচার্যের (প্রশাসন) সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য ও সরেজমিনে দেখা যায়, আজ বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন থেকে গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছিলেন সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁর গাড়ি আটকে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা সহ-উপাচার্যের গাড়ির ইঞ্জিনের ওপর প্রতীকী ‘ভিক্ষা’ হিসেবে খুচরা টাকা দেন। প্রায় ২০ মিনিট সেখানে সহ–উপাচার্যকে গাড়িতে আটকে বিক্ষোভ করা হয়। এরপর গাড়িচালকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা গাড়ির চাবি কেড়ে নিলে সহ-উপাচার্য গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে তাঁর বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। তখন শিক্ষার্থীরা তাঁর পিছু নেন। একপর্যায়ে দৌড়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁর বাসভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে সেখানে আটকা পড়েন সহ-উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্যের গাড়ি আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। শনিবার বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্যের গাড়ি আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। শনিবার বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ‘নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা এমন করতে পারে না’ বললে তাঁর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে সহ-উপাচার্য, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের দিকে এগিয়ে যান। শিক্ষার্থীরাও তাঁদের পিছু নিয়ে জুবেরী ভবনের সামনে যান। শিক্ষার্থীরা তাঁদের জুবেরী ভবনে ঢুকতে বাধা দিলে বিকেল সোয়া চারটার দিকে জুবেরী ভবনের ফটকে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

পরে সহ–উপাচার্য জুবেরী ভবনের দোতলায় অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীরা তাঁকে আটকে রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে বিকেল পাঁচটার শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল জুবেরী ভবনে যান।

জুবেরী ভবনে সহ-উপাচার্য মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে যতই ভাত না খেয়ে রাখুক, যতই বাসায় ঢুকতে না দিক, আমি একক কোনো সমাধান দেওয়ার এখতিয়ার রাখি না। সমাধান বডিতে বসে দেওয়া লাগবে। আমি কেন অবরুদ্ধ হলাম, সেটা আমার জানা নাই।’

এ ঘটনায় সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘জুলাইয়ের পর আবার মাইর খাওয়া শুরু হলো। রাবি প্রশাসন গায়ে হাত তুলল, গলা চেপে ধরল। কোনো অভিযোগ দেব না, তদন্ত কমিটিও গঠন করব না। শুধু পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল করবে। ইনসাফের লড়াইয়ে রাবিয়ানরা আরেকবার এগিয়ে আসেন।’ তিনি জুবেরী ভবনে বলেন, ‘সবাইকে ডাকেন। আরও একটি বিপ্লব এই ক্যাম্পাসে হোক। পোষ্য কোটাকে নামে-বেনামে এই ক্যাম্পাসে থাকতে দেব না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে

প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিলেন। এ সময় প্রশাসন ভবনে গাড়ি আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে তিনি হেঁটে বাসায় যেতে থাকেন। তাঁকে বাসায় যেতে দেওয়া হয়নি। পরে পাশেই জুবেরী ভবনে আলোচনার জন্য চেয়েছিলেন। জুবেরী ভবনে প্রবেশ করার সময় সামনে এসে দাঁড়ান শিক্ষার্থীরা। তখন এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। কে কীভাবে শুরু করেন, তিনি জানেন না।

প্রক্টর আরও বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীর হাত ধরতে পারি। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী তো সহ-উপাচার্যের হাত ধরে টেনে ধরতে পারে না। এটা মনে করি, লাঞ্ছিত করা। আমার হাতের ঘড়ি, পকেটের ১০ হাজার টাকা পাচ্ছি না। সহ-উপাচার্য জুবেরী ভবনের বারান্দায় আছেন। তাঁকে শিক্ষার্থীরা ঘিরে রেখেছেন।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.