রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার’ ওপর হামলার প্রতিবাদে মশালমিছিল

0
8
ঢাকায় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার’ ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়
ঢাকায় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার’ ওপর হামলার প্রতিবাদে মশালমিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে মশালমিছিলটি শুরু হয়।
 
ক্যাম্পাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিছিলটি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে।
 
সমাবেশ থেকে বিক্ষোভে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী শব্দসংবলিত গ্রাফিতির ছবি পুনর্বহাল এবং স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি নামের সংগঠনকে উগ্রবাদী আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি জানান তাঁরা।
 
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমরা সবাই আদিবাসী, আমরা নই উপজাতি’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘পুলিশের হামলা কেন, রাষ্ট্র তোমার জবাব চাই’, ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, দিতে হবে দিতে হবে’, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘আমার ভাইকে মারল কেন, রাষ্ট্র তোমার জবাব চাই’, ‘পাহাড় কিংবা সমতলে, লড়াই হবে সমানতালে’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, আদিবাসীদের অ্যাকশন’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
 
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন, ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) আহ্বায়ক রাকিব হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জুস্মিতা সরেন, ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ছয়েস তালুকদার, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তুহিন চাকমা প্রমুখ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি বিজয় চাকমা।
 
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের পর তাঁরা আশা করছিলেন, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার, বহুমাত্রিক, বৈষম্যহীন ও অন্তর্বর্তীমূলক বাংলাদেশ গঠিত হবে। কিন্তু সবার মুখে শুধু বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কথার ফুলঝুড়ি, বাস্তবে এ কথার কোনো প্রয়োগ নেই। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও তাঁরা সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাননি। যখনই তাঁরা ন্যায্য অধিকার ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেন, তখনই একটা পক্ষ তাঁদের ভারতের দালাল বলে বিভাজন তৈরি করে এবং দেশ ভাগ করার অভিযোগ তোলে। বৈষম্যহীন দেশ গড়ার জন্য গণ–অভ্যুত্থানে তাঁরাও আন্দোলন করেছেন। তাঁরা কখনোই দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চান না।
 
শিক্ষার্থী ছয়েস তালুকদার বলেন, ‘আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ বাহিনী কীভাবে হামলা করেছে। একই কায়দায় আজকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে পুলিশ। আমরা এ হামলাকারী পুলিশের বিচার চাই। সেই সঙ্গে স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি নামের উগ্রবাদী সংগঠনের হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচার আওতায় আনতে হবে এবং ওই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
 
‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার’ মিছিলে হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুজন কারাগারে
সরকারের সমালোচনা করে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠী তো পাঠ্যবইয়ে আদিবাসী শব্দসংবলিত গ্রাফিতি যুক্ত করতে বলেনি। সরকারই যুক্ত করে আবার সেটা বাতিল করল। তাহলে ওনারা কী এর দায় নেবে না? আসলে ওনারা মূলত বিভাজনের রাজনীতি করে, বিভাজনের মধ্য দিয়ে মানুষকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফায়দা নিতে চায়। দীর্ঘ ৫০ বছর দেশের রাজনীতিতে আমরা এটাই দেখেছি। এই বিভাজনের রাজনীতি দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, এটাই তার প্রমাণ।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.