এক দশক পর ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে আসা জামায়াতে ইসলামী এবার ঢাকার বাইরে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির সূত্র জানিয়েছে, চলতি জুলাই মাসেই জামায়াত রাজধানী ঢাকা ছাড়া পাঁচটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর আগস্ট মাসে কয়েকটি জেলা ও বিভাগ হয়ে ঢাকায় বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, প্রথম সমাবেশ হবে সিলেট মহানগরে। ১৫ জুলাই সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে এই সমাবেশের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সিলেট মহানগর জামায়াত সমাবেশের অনুমতি চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেছে। সিলেটের পর চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায়। এরপর জামায়াত রাজশাহী ও খুলনায় সমাবেশ করবে। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি চলছে।
দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত প্রকাশ্য রাজনীতিতে নেই। প্রশাসনিক নানা চাপ ও গ্রেপ্তার–আতঙ্কে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় গোপনে। ফলে প্রকাশ্য রাজনীতিতে এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি জামায়াতকে অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক করে তুলছিল।
বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকার ও বিরোধী পক্ষের রাজনীতিতে যে উত্তাপ তৈরি হয়েছে, তাতে জামায়াত অনেকটাই আলোচনার বাইরে চলে যায়। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতেই দলের নীতিনির্ধারকেরা ঢাকার পর এবার পাঁচ বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তা ছাড়া এই সমাবেশ কর্মসূচিগুলোর মধ্য দিয়ে আবার স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমের ধারায় ফেরাটাও জামায়াতের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানা গেছে।
জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এই কর্মসূচিগুলোতে প্রশাসন বাধা দেবে না বলেই তারা আশা করে। তবে বাধা দিলে এ ক্ষেত্রে ভিন্ন কৌশলে হলেও মাঠে থাকবে জামায়াত।
অবশ্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ আশা করেন, তাঁরা সমাবেশ করার অনুমতি পাবেন। তিনি বলেন, সিলেটের পর পর্যায়ক্রমে সব বিভাগীয় ও জেলা সদরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশের বাইরে নতুন কর্মসূচিও আসবে।
এক দশক পর পুলিশের অনুমতি নিয়ে গত ১০ জুন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রকাশ্যে সমাবেশ করে জামায়াত। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির ঘোষণার পর ১৮ দিনের মাথায় জামায়াত ঢাকায় ওই সমাবেশ করে। কিন্তু নির্বাচনের ডামাডোলের আগে হঠাৎ করে দলটির সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠে।
অনেকের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়, এটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সমঝোতার ইঙ্গিত কি না। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ভুল–বোঝাবুঝিও হয়। যদিও জামায়াত বলেছে, তারা ১০ জুনের সমাবেশের ব্যাপারে দৃঢ় ছিল। এ ক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির সুযোগ নিয়েছে।
দলীয় নির্দেশনার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য বলেন, তাঁদের কর্মসূচির লক্ষ্য এই সরকারের পতন। এ ছাড়া তাঁদের দাবির মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দলের আমিরসহ রাজবন্দীদের মুক্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মতো জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলো থাকবে।
জামায়াতের নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে জামায়াতের কর্মসূচির ওপর অনেকের দৃষ্টি থাকবে। কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ না হলে নতুন করে বিতর্কে পড়বে দল। ফলে এই কর্মসূচিগুলোতে জমায়েতের ব্যাপারে সংযত থাকবে জামায়াত, যাতে সবদিক রক্ষা হয়। এর মধ্য দিয়ে দলটি পৃথক কর্মসূচি দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হবে।