রাজধানীতে এডিস মশার লার্ভা এবার বেশি

0
190
ডেঙ্গু মশা

ঢাকায় বসতবাড়িতে এবার প্রাক্‌–বর্ষা মৌসুমেই এডিস মশার শূককীট বা লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। গত বর্ষা মৌসুমের তুলনায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ বেশি বাড়িতে লার্ভা পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপ–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বসতবাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি যে পর্যায়ে পাওয়া গেছে, তাতে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা বছরে তিনবার মশা জরিপ করে। প্রাক্‌-বর্ষা, বর্ষা ও বর্ষা–পরবর্তী জরিপ।

তাদের প্রাক্‌-বর্ষা জরিপ ১৭ জুন শুরু হয়েছে, শেষ হবে আজ মঙ্গলবার। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়িতে জরিপ শেষ হয়েছে। এতে যে তথ্য এসেছে, তাতেই ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘নিশ্চিত করেই বলতে পারি, গত বর্ষার ভরা মৌসুমে যত বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে, এবার প্রাক্‌–বর্ষা মৌসুমে তার চেয়ে কম নয় বরং বেশি বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে। জরিপ এখনো শেষ হয়নি, হয়তো ৫–৬ শতাংশ বেশি হতে পারে। গত চার–পাঁচ বছরে এত বেশি বাড়িতে লার্ভা পাওয়া যায়নি।’ তিনি জানালেন, জরিপে নির্মাণাধীন ভবন, বাড়ি, বহুতল ভবন, বেজমেন্ট, আধা পাকা বাড়ি ও বস্তি এলাকায় মশার উপস্থিতি জানার চেষ্টা করা হয়।

তখনই আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি হবে। এবার পরিস্থিতি সত্যিই ভাবিয়ে তোলার মতো। তবে সকলে মিলে কাজ করলে এখনো প্রতিরোধ সম্ভব।

অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জরিপকারীরা প্লাস্টিকের নানা ধরনের পাত্র, কোমল পানীয়ের বোতল, কলাপসিবল গেটের নিচের অংশ, ফেলে দেওয়া টায়ারের অংশ, দইয়ের ফেলে দেওয়া পাত্র, ছাদবাগানের ফুলের টব, পানির মিটারের কাছের গর্ত, ডাবের খোসা, অব্যবহৃত কর্কশিট, সিরামিকের পাত্র, সিঁড়ির পাশের ভাঙা হাতল, যানবাহনের অংশ, গাড়ির গ্যারেজেসহ অনেক কিছুতেই লার্ভা পাচ্ছেন।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো. ইকরামুল হক এবারের প্রাক্‌–বর্ষা মৌসুমের জরিপের এ পর্যন্ত পাওয়া ফলাফল জানান। তিনি বলেন, ঢাকায় প্রাক্‌–বর্ষা জরিপে দুই সিটির মোট ৩ হাজার ১৫০ বাড়িতে জরিপ হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে ২ হাজার ২০০ বাড়িতে জরিপ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫০ বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৬ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে।

আগে গড়পড়তা ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িতে জরিপের পর সর্বোচ্চ ২০০ বাড়িতে লার্ভা মিলত। এবার পুরো জরিপ হয়নি, তাতেই এত বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে। পুরো জরিপ শেষে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। এবার পরিস্থিতি বেশ আশঙ্কাজনক।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো. ইকরামুল হক

গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বর্ষা মৌসুমের জরিপে রাজধানীর ১২ শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। আর চলতি বছরের এপ্রিলে বর্ষা–পরবর্তী জরিপে ঢাকার ৪ শতাংশের বেশি বাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি দেখা যায়। ঢাকা উত্তরের চেয়ে দক্ষিণে লার্ভার উপস্থিতি কিছুটা বেশি।

ইকরামুল হক বলেন, ‘আগে গড়পড়তা ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িতে জরিপের পর সর্বোচ্চ ২০০ বাড়িতে লার্ভা মিলত। এবার পুরো জরিপ হয়নি, তাতেই এত বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে। পুরো জরিপ শেষে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। এবার পরিস্থিতি বেশ আশঙ্কাজনক।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে এবারের প্রাক্‌–বর্ষার জরিপের ফল তুলে ধরবে। এমন এক সময় জরিপের ফলাফল প্রকাশ হতে যাচ্ছে, যখন ডেঙ্গু প্রায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের প্রথম ছয় মাসকে ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর প্রথম ছয় মাসে একজনের মৃত্যু হয়েছিল, আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৯। আর গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বলছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৬০৯ জন।

অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘গত বর্ষা–পরবর্তী জরিপে গড়ে ৪ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও কোনো কোনো এলাকায় ১০ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল। তখনই আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি হবে। এবার পরিস্থিতি সত্যিই ভাবিয়ে তোলার মতো। তবে সকলে মিলে কাজ করলে এখনো প্রতিরোধ সম্ভব।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.