রাজউকের প্লটে বাজার বসিয়ে চাঁদাবাজি

0
132
রাজউকের প্লট দখল করে বাজার গড়ে চাঁদাবাজি করছে স্থানীয় একটি চক্র। সম্প্রতি উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরে

বাজার পরিচালনাকারী চক্রের মূলে আছেন ঢাকা উত্তর সিটির শ্রমিক লীগের একজন নেতা। তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় এক আ.লীগ নেতা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লটের জায়গায় অবৈধ বাজার বসিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এককালীন প্রায় ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এ ছাড়া দোকানিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে আরও সাড়ে ৯ লাখ টাকার বেশি চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৫০ লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন বাজার পরিচালনাকারী চক্রের সদস্যরা।

ব্যবসায়ী, স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজউকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজার পরিচালনাকারী চক্রের মূলে আছেন ঢাকা উত্তর সিটির ৫২ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে রুস্তম। তাঁর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন শ্রমিক লীগ কর্মী আনোয়ার হোসেন ও মো. কাশেম।

আর পেছন থেকে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য ইব্রাহিম হোসেন ওরফে গণি। তিনি সাবেক হরিরামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং বর্তমানে ৫২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজউকের উত্তরা তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের ১৬ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর অ্যাভিনিউ সড়কের উত্তর পাশের প্লটের খালি জায়গা দখল করে বাজার বসেছে। বাজারের তিনটি অংশে কাঁচাবাজার, ফুডকোর্ট এবং মুদি পণ্য ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির দোকান রয়েছে। কাঁচাবাজারে সবজি, মাছ ও মাংসের প্রায় ২৬টি দোকান আছে।

রুয়াপ (রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট) বাজার নামের ফুডকোর্টে ফুচকা-চটপটি, চা ও ভাজাপোড়া এবং ফাস্ট ফুড-জাতীয় খাবারের প্রায় ৬০টি দোকান আছে। আরেকটি অংশে মুদি পণ্য, খাবার হোটেল, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস এবং স্যানিটারি পণ্যের প্রায় ৮০টি দোকান রয়েছে। দোকানগুলো কাঠ-বাঁশের কাঠামোয় টিনের বেড়া ও ছাউনি দিয়ে তৈরি। বাজারের ৯ জন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজার চালান রুস্তম, আনোয়ার ও কাশেম। আর নিয়ন্ত্রণ করেন গণি মেম্বার। দৈনিক চাঁদা বাবদ ফুডকোর্টের প্রতি দোকান থেকে ১০০-২০০ টাকা, কাঁচাবাজার থেকে ১৫০-২৫০ টাকা এবং মুদিদোকান ও খাবার হোটেলসহ অন্য দোকান থেকে ২৫০-৩০০ টাকা তোলা হয়।

বাজারে একটি দোকান থেকে গড়ে দৈনিক ২০০ টাকা হিসাবে মাসে আদায় হয় ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতিটি দোকানের ভিট (দোকানের জায়গা) বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। বড় হোটেল, রেস্তোরাঁ কিংবা দোকানের জায়গার জন্য নেওয়া হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ভিটপ্রতি গড়ে ২০ হাজার টাকা হিসাবে এককালীন আদায় করা টাকার পরিমাণ প্রায় ৩২ লাখ টাকা।

বাজারটির একটি খাবার হোটেলের ব্যবসায়ী বলেন, দোকান ভাড়া বাবদ দৈনিক ২৫০ টাকা নেয় কাশেম। তাঁর পরিবর্তে মাঝেমধ্যে আনোয়ার টাকা তোলেন। এ ছাড়া ময়লা ও ঝাড়ুর বিল বাবদ সপ্তাহে ২০০ টাকা এবং রাতের পাহারাদারের জন্য ৩০ টাকা দিতে হয়। ভিট বাবদ তাঁর ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল।

অন্যদিকে বাজারে পানি সরবরাহে অবৈধভাবে একটি সাবমারসিবল পাম্প (গভীর নলকূপ) বসানো হয়েছে। রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ। এ দুই খাতেও দোকানভেদে সপ্তাহে ১০০-২০০ টাকা তুলছেন বাজার পরিচালনাকারী চক্রের নেতারা।

বাজারটিতে একটি অ্যাগ্রো ফার্ম প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্র আছে। সেখানে দোকান ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানজির আহমেদ বলেন, তাঁরা ৪০ হাজার টাকায় রুস্তমের কাছ থেকে জায়গাটি ভাড়া নিয়েছেন। দৈনিক ৩০০ টাকা ভাড়া দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। আর দোকানের অবকাঠামো নিজেরা নির্মাণ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে চাঁদা আদায়কারী মো. কাশেম বলেন, বাজারে কয়েকজন মাথা লাগে। তাঁরা কয়েকজন দোকানি মিলে ওই কাজটি করছেন। শ্রমিক লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে রুস্তম বলেন, গত ডিসেম্বরে বাজারটি চালু হয়। দোকানিরা মিলে বাজার দেখাশোনা করেন। চাঁদা আদায়ের বিষয়টি মিথ্যা বলেও তিনি দাবি করেন।

দোকানিরা বলছেন, রাজউকের কর্মকর্তারা প্রায়ই বাজারে যান। তখন তাঁদের খুশি করতে নেতারা মাছ-মাংস ও অন্যান্য বাজার দিয়ে দেন। আর রাজউকের কর্মকর্তাদের খুশি রাখতে দোকান থেকে চাঁদা নেওয়া হয়।

বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম হোসেনের ভাষ্য, তিনি ওই বাজার পরিচালনা কিংবা চাঁদাবাজি, কোনো কিছুর সঙ্গেই যুক্ত নন। যারা তাঁর নাম বলেছে, তারা মিথ্যা বলেছে।

রাজউক তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্প পরিচালক হাফিজুল ইসলাম বলেন, শিগগিরই ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বাজারটি উচ্ছেদ করা হবে। তিনি বলেন, রাজউকের কোনো কর্মকর্তা বাজার পরিচালনায় সম্পৃক্ত নয়। বাজার থেকে কর্মকর্তাদের সুবিধা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.