রহস্যের জট খোলেনি চার বছরেও

0
139
শাহবাগ থানা

রাজধানীর শাহবাগ থানার প্রধান ফটকে বরাবরের মতোই ছিল পুলিশি পাহারা। ভেতরেও বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশ সদস্যরা। পুরো এলাকা ছিল সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারিতে। এর মধ্যেই দিন-দুপুরে থানা থেকে চুরি হয় সরকারি অস্ত্র ও গুলি। এ ঘটনায় একটি মামলাও হয়। তদন্তের প্রথম পর্যায়েই সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজন এক যুবককে শনাক্ত করে পুলিশ। তবে ওই পর্যন্তই। এর পর গত চার বছরে রহস্যের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত। কী কারণে চুরি, এর  নেপথ্যে কে বা কারা, সেই অস্ত্রটি এখন কোথায়– এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি প্রথমে তদন্ত করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে গুরুত্ব বিবেচনায় তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়। ডিবি রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মিশু বিশ্বাস  বলেন, চার বছর আগের ঘটনাটির ব্যাপারে এখন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া কঠিন। তখনকার তদন্তেই তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তবু সম্ভাব্য সবগুলো উপায়ে চেষ্টা চলছে। প্রযুক্তিগত সুবিধা না পাওয়ায় বিকল্প পদ্ধতিতে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া যুবকের ছবি বিভিন্ন স্থানে লোকজনকে দেখিয়ে তার সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করছে ডিবি।

২০১৯ সালের ৫ মে দুপুরে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে শাহবাগ থানা ভবনের দোতলায় বিশ্রামকক্ষে ফেরেন এএসআই হিমাংশু সাহা। বিশ্রামের এক পর্যায়ে তিনি দেখেন, তার পিস্তল ও দুটি ম্যাগাজিন নেই। অনেক খুঁজেও আর সেগুলো পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সবার আগে খবর প্রকাশ করে। এর পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।

মামলাটির প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শাহবাগ থানার তৎকালীন এসআই (বর্তমানে মাদারীপুর জেলা সিআইডির পরিদর্শক) মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যুবককে শনাক্তের পথে কিছুটা এগিয়েছিল তদন্ত। তার সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে তথ্য মিলেছিল। তবে পরে মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়।

তিনি জানান, শাহবাগ থানার বিশ্রামকক্ষের ভেতরে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় চুরির কোনো ছবি পাওয়া যায়নি। তবে বাইরের একটি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, থানার সাব-কন্ট্রোল রুমের পাশের রাস্তা দিয়ে সন্দেহভাজন এক যুবক এসে সোজা দোতলায় উঠে যান। ঢোকা ও বের হওয়ার সময় তাঁকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, তিনিই অস্ত্র-গুলি চুরি করেন।

ঘটনার মাসখানেক পর সন্দেহভাজন যুবকের ছবি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউজ পোর্টালে প্রকাশ করে তাঁকে গ্রেপ্তারে সহায়তা চাওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, সাদা-কালো চেক শার্ট ও ধূসর প্যান্ট পরা এক যুবক থানা থেকে বের হচ্ছেন। তাঁর কাঁধে কালো ব্যাগ। মুখে হালকা দাড়ি আছে।

মামলাটি ডিবিতে যাওয়ার পর প্রথমে তদন্ত তদারকির দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত উপকমিশনার (বর্তমানে ডিবি মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার) রাজীব আল মাসুদ। তিনি বলেন, নানা উপায়ে অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয়। কিছু তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানও চালানো হয়েছে। তবে চুরি যাওয়া অস্ত্রের সন্ধান মেলেনি। এক পর্যায়ে ডিবির দায়িত্বাধীন এলাকা পুনর্বিন্যাসের পর মামলাটি রমনা বিভাগে চলে যায়।

ডিবি সূত্র জানায়, ওই অস্ত্র চুরির কিছু দিন পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এক দুর্বৃত্ত নিহত হয়। তার কাছে পাওয়া যায় দুটি আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে একটি ছিল অবৈধ অস্ত্র, অপরটি সরকারি কোনো বাহিনীর ব্যবহৃত পিস্তল। প্রথমে ভাবা হয়েছিল সেটি শাহবাগ থানার চুরি যাওয়া অস্ত্র। তবে যাচাই করে দেখা যায়, তা নয়।

অপরাধীরা সাধারণত অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে। তবে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র চুরি করে না। তাছাড়া পুলিশের কোনো ইউনিট থেকে অস্ত্র চুরি সহজসাধ্যও নয়। ধরা পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এর পরও থানা থেকে চুরির পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। চুরির সঙ্গে শাহবাগ থানার কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকতে পারেন বলেও সন্দেহ করেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তাঁর ধারণা, ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে এএসআই হিমাংশুকে ফাঁসাতে সহকর্মীদের কেউ ওই অস্ত্র-গুলি সরিয়ে থাকতে পারেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.