রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ভাঙাপ্রেস এলাকায় আবর্জনার স্তূপ থেকে এক নারীর পোড়া ও গলিত মৃতদেহ উদ্ধারের দেড় বছর পরও রহস্যের জট খোলেনি। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা হত্যা বলে ধারণা করলেও ঠিক কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয় জানা যায়নি। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা নিশ্চিত হতে পারেননি মৃত্যুর কারণ। পুলিশের তদন্তেও এ ব্যাপারে তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। সেইসঙ্গে এখনও জানা যায়নি তাঁর পরিচয়।
এ-সংক্রান্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মুকিত হাসান বলেন, সম্ভাব্য সব উপায়ে মৃতের পরিচয় জানার চেষ্টা করা হয়েছে; কিন্তু তা কাজে আসেনি। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন লাশ শনাক্ত করতে এলেও কেউ চিনতে পারেননি। বরং এই সূত্র ধরে আরেক হত্যারহস্যের জট খুলেছে। এক পরিবার তাদের নিখোঁজ মেয়ের লাশ ভেবে এসেছিল। পরে তাদের মেয়ের লাশের সন্ধান পাওয়া যায় আরেক জায়গায়।
এসআই মুকিত জানান, লাশ উদ্ধারের আনুমানিক ১০-১২ দিন আগে ওই নারীর মৃত্যু হয়। মৃতদেহ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে প্রয়োজনীয় আলামতও মেলেনি। তদন্ত এগিয়ে নেওয়ার মতো আর কোনো তথ্যসূত্র নেই। এখন ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। শেষ পর্যন্ত রহস্যের সমাধান না হলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) জমা দেবে পুলিশ।
২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনের ময়লার স্তূপে ওই নারীর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, হত্যায় এক বা একাধিক পেশাদার অপরাধী জড়িত ছিল। শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশের পরিচয় লুকাতে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এমন হতে পারে, ওই নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার। পরে তাঁকে হত্যা করা হয়। পারিবারিক সহিংসতার বলিও হয়ে থাকতে পারেন তিনি। তবে মৃতদেহ ময়লার স্তূপে কীভাবে গেল সেটি স্পষ্ট হওয়া যায়নি। সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়িতে করে লাশটি সেখানে নেওয়া হতে পারে বলেও ধারণা করা হয়।
আবার কেউ কেউ এমনও বলছেন, তিনি হয়তো ভাসমান বা মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় ময়লার স্তূপে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন বা মারা যান। প্রতিদিন ওই স্থানে ময়লা ফেলায় তাঁর লাশ চাপা পড়ে যায়। নির্দিষ্ট সময় পর পর ময়লা পুড়িয়ে ফেলা হয়। ফলে তাঁর মৃতদেহ আগুনে পুড়ে যায়।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, লাশ উদ্ধারের পর পরিচয় শনাক্ত করতে সারাদেশে বেতার বার্তা পাঠানো হয়। এতে অনেকেই যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চালান যে, মৃত নারী তাদের নিখোঁজ স্বজন কিনা। ঢাকার মুগদা, দক্ষিণখান, মাদারীপুর ও নরসিংদীসহ কয়েকটি এলাকা থেকে লোকজন আসে। তবে লাশ বিকৃত হওয়ায় তাঁরা কেউই চিনতে পারেননি। আঙুলের ছাপ না পাওয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার থেকেও কোনো সহায়তা নেওয়া যায়নি। এ কারণে মৃতের ডিএনএ আলামত সংরক্ষণ করা হয়েছে। লাশের দাবিদার পেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা যাবে।