অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, কৃষির উন্নতি শুধু কৃষকের কাজ নয়। এতে বিজ্ঞান ও শিক্ষিতদের যুক্ত করতে হবে। এ জন্য তিনি পতিসরে প্রজাদের কৃষি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করেছিলেন। আজ বাংলাদেশ অনেক বিজ্ঞানী ও গবেষকদের এই কাজে যুক্ত করে কৃষিতে সফলতা পেয়েছে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘আকাশে দুই হাতে প্রেম বিলায়’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, চট্টগ্রাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ‘প্রান্তজনের প্রতি রবীন্দ্রনাথের দায় এবং পতিসর’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি আতিউর রহমান।
আতিউর রহমান বলেন, এই রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ হতেন না, যদি পূর্ববঙ্গে না আসতেন। প্রজাদের অভাব ও দুঃখ দূর করার জন্য অনেক উদ্যোগ নেন তিনি। কৃষিশিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত করার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করতেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, যে মানুষ অপর মানুষকে সম্মান করতে পারে না, সে মানুষ কারও উপকার করতে পারে না। তিনি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেনের কষ্ট তুলে ধরেছেন। প্রান্তজনের প্রতি সব সময় ছিল তাঁর অগাধ ভালোবাসা। কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে তিনি পতিসরে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এখনো পতিসর তাঁর স্মৃতি বহন করে চলেছে। দারিদ্র্যপীড়িত মানুষকে কবি ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন। তাই নিজে জমিদার হয়েও প্রজাদের ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে কাজ করেন কবি।
আতিউর রহমান বলেন, ১৮৯১ সালের ১৩ জানুয়ারি পতিসরে আসেন কবি। রবীন্দ্রনাথ এই অঞ্চলের কৃষি ও শিক্ষাব্যবস্থার জন্য স্কুল এবং ব্যাংক গড়ে তোলেন। রবীন্দ্রসংগীত ও রবীন্দ্র–পাঠ চর্চা একসঙ্গে চালাতে হবে। তাঁর সৃষ্টি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
সম্মিলন পরিষদের চট্টগ্রামের সভাপতি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুপম সেন বলেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছেলে ও জামাতাকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন কৃষিশিক্ষা গ্রহণ করতে। তাঁদের বলেছিলেন, ফিরে এসে প্রজাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাঁর ছেলে ফিরে এসে সেই কাজে লেগেছিলেন।
অনুপম সেন বলেন, বাঙালির যাপিত জীবনে রবীন্দ্রনাথ এক অনিবার্য সত্তা। বাঙালির প্রেম–বিরহ–বেদনাকে একীভূত করেছেন তাঁর সৃষ্টিতে। তাঁর মধ্যে বাঙালি বেঁচে থাকার প্রেরণা খুঁজে বেড়ায়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শ্রেয়সী রায়। শ্রেয়সী রায় বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথকে জানা আমার ফুরাবে না। বাঙালির প্রেম–বিরহের কবি রবীন্দ্রনাথ।’
নাট্যজন অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন পরিষদের সহসভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম ও অনুবাদক আলম খোরশেদ। এর আগে গানের সুরে সুরে প্রদীপ প্রজ্বালন করেন অতিথিরা।
পরে পরিষদের চট্টগ্রামের সদস্যদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় গীতি-আলেখ্য ‘হে বন্ধু, হে প্রিয়’। পরিচালনায় ছিলেন শিল্পী শ্রেয়সী রায়। নৃত্য পরিচালনা করেন প্রমা অবন্তী। কখনো সমবেত, কখনোবা একক কণ্ঠে ভেসে আসে দুই হাতে প্রেম বিলায়; চির বন্ধু চির নির্ভর; আমি বহু বাসনায় ইত্যাদি গান। শেষে সংগীত পরিবেশন করেন অতিথি শিল্পী বুলবুল ইসলাম, লাইসা আহমেদ লিসা ও সুকান্ত চক্রবর্তী।