আজ সকাল ১০টার দিকে পৌরসভার চাঁচকৈড় বাজারে ওই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে নাটোর জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ড ভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁচকৈড় শাখা। মানববন্ধনে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়। কর্মসূচিতে হেলালের স্বজন, সহকর্মীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেন।
রক্তমাখা প্যান্টের দুটি অংশ নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন নিহত হেলাল সরদারের মা হেনা বেগম, স্ত্রী হাসি খাতুন, দুই শিশু হাসিফ হোসেন (৬) ও ফাতেমা (৩) এবং আহত ভাই শিশিরের স্ত্রী জান্নাতুল বেগম ও তাঁর আট মাসের সন্তান সওদা।
মানববন্ধনে হেলালের স্ত্রী হাসি খাতুন দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, স্বামীর আয়েই সংসার চলত। সন্ত্রাসীরা সেই মানুষটিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করল। এখন বিচার পাওয়া, মামলা চালানোর খরচসহ অবুঝ দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি করেন তিনি।
নিহত হেলালের মা হেনা বেগম বলেন, পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলীর আশ্রয়–প্রশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা তাঁর এক ছেলেকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আরেক ছেলেকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে। মেয়রের মদদ না থাকলে চাঁচকৈড় হাটের মধ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার সাহস অন্য কারও নেই বলে তিনি দাবি করেন।
হত্যার পেছনের কারণ উল্লেখ করে হেনা বেগম বলেন, হত্যা মামলার সব আসামি পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলীর সঙ্গে রাজনীতি করেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলার পাটপাড়া হাটের দরপত্র নিয়ে মেয়রের সমর্থক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরের সঙ্গে হেলালের বাগ্বিতণ্ডা হয়েছিল। হেলাল ওই ঘটনার জেরে আবু তাহেরকে মারধর করেছিলেন। এরপর হেলালের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। মামলায় হেলাল কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন। বিষয়টি আপসের জন্য মেয়র শাহনেওয়াজকে কয়েক দফা বলা হয়েছিল। কিন্তু মেয়র বিষয়টি আপস না করেই তাঁর দুই ছেলেকে শ্রমিক অফিসে গিয়ে কাজ করতে বলেছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর আবু তাহেরের ভাই তুহিনের নেতৃত্বে তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়।
মানববন্ধনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আলাল শেখ, আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, রাজমিস্ত্রি শ্রমিক সমিতির সভাপতি জয়নুদ্দিন, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য গুলজার হোসেন, সংসদ সদস্যের ছেলে আসিফ আবদুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধনে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুস।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মুঠোফোনে বলেন, তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেন। এ কারণে তিন মেয়াদে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। গত সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন। এ কারণে দলীয় প্রতিপক্ষরা তাঁকে ঘিরে ঘৃণ্য রাজনীতিতে মেতেছেন। কোনো সন্ত্রাসীকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেন।
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, হেলাল হত্যা মামলায় ইতিমধ্যে আবু তাহেরের ছোট ভাই তুহিন হোসেন (২৫), তাঁর সহযোগী আকাশ হোসেন (২০) ও ত্বোহা হোসেনকে (২২) গ্রেপ্তার করে গতকাল বুধবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।