যেসব কারণে মুসলিম ভোটব্যাংক ঝুঁকে পড়েছে ট্রাম্পের দিকে

0
29
ট্রাম্প
আর মাত্র কয়েক প্রহর পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। শেষদিনের প্রচারণা শেষ ইতোমধ্যে। অপেক্ষা শুধু ব্যালটযুদ্ধের। অবশ্য ইতোমধ্যে ৭৭ মিলিয়নের বেশি নাগরিক আগাম ভোট দিয়ে দিয়েছেন তাদের। জনমত জরিপগুলো বলছে, মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে এবারের নির্বাচনে; যেখানে প্রত্যাবর্তনের অনন্য এক লিখতে মুখিয়ে আছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসও আশায় বুক বেঁধে আছেন প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন ইতিহাসে নাম লেখাতে।
 
মার্কিন নির্বাচনে বড় একটি ভোটব্যাংক সুইং স্টেট হিসেবে খ্যাত মিশিগানের আরব মুসলিমরা। ১৫টি ইলেকটোরাল ভোট আছে এ স্টেটটিতে, যা ব্যবধান গড়ে দিতে পারে হোয়াইট হাউসের দৌড়ে থাকা দুই প্রতিযোগীর মধ্যে। চলমান মধ্যপ্রাচ্য অস্থিরতার কথা মাথায় রেখে তাই ট্রাম্প-কমলা দুজনই কয়েক দফায় জোর প্রচারণা চালিয়েছেন মিশিগানে।
 
তবে, জনমত জরিপগুলো দেখাচ্ছে, গাজা-লেবাননে চলমান যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের নীতির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে আমেরিকান মুসলিমদের আস্থা হারিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। তাদের বিকল্প হিসেবে তাই রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের দিকেই অনেকটা ঝুঁকে পড়েছেন মুসলিম ভোটাররা।
 
যদিও কমলা তার নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ জোর গলায় উচ্চারণ করেছেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধে নিজের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবেন তিনি; তবুও যুক্তরাষ্ট্রের আরব মুসলিম নাগরিকদের বেশিরভাগই বিশ্বাস করেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি হিসেবে বাইডেন প্রশাসনের নীতির ধারাবাহিকতাই বজায় রাখবেন কমলা। অপরদিকে ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি দুর্বল হলেও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলি দখলনীতিতে সহায়তার ক্ষেত্রে লাগাম টানবেন তিনি।
 
আরব মুসলিমদের এখন রিপাবলিকান পার্টিকে সমর্থনের আরও দুটি কারণে—ডেমোক্র্যাটদের ‘লিঙ্গ মতবাদ’ এবং স্কুলে শিশুদের ‘বিপথগামী শিক্ষাদান’।
 
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কথা বলার সময় অনেক মুসলিম ভোটার জানিয়েছেন, ডেমোক্র্যাটদের ‘অদ্ভুত’ লিঙ্গ মতবাদ তাদের ইসলামিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রিপাবলিকানরা এই মতবাদকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানোর কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টির প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ছে।
 
মার্কিন মুসলিম নাগরিকদের অনেকের অভিযোগ, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি মূলধারার মুসলিম ও আরব আমেরিকানদের মূল্যবোধের সঙ্গে আর সামঞ্জস্য ধরে রাখতে পারছে না।
 
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০১৭ সালের নির্বাহী আদেশে মুসলিম-প্রধান ছয়টি দেশের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত মুসলিমদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল, তবে এখন রিপাবলিকান পার্টি ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষার আহ্বান জানিয়ে মুসলিমদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
 
ইসলামের বেশিরভাগ প্রচলিত মতবাদে গর্ভপাত বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুমোদিত হলেও লিঙ্গ পরিবর্তন পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ফলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির লিঙ্গ ও যৌনতার ওপর মতবাদ মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।
 
২০২২ সালে মেরিল্যান্ড ও মিশিগানের মুসলিম অভিভাবকরা জানতে পারেন যে, তাদের স্কুল জেলা পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন এনেছে যাতে ‘লিঙ্গ ও যৌন পরিচয়’ বিষয়ক বই পড়ানো হবে এবং পিতা-মাতাকে এর আগে আর জানানো হবে না। এতে ক্ষুব্ধ মুসলিম অভিভাবকরা বাচ্চাদের এমন শিক্ষাদানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং ‘অপ্ট-আউট’ অপশন ফিরিয়ে আনার দাবি তোলেন।
 
এ প্রেক্ষাপটে মিশিগানে এক সমাবেশে গত ২৬ অক্টোবর ট্রাম্প বলেছেন, মুসলিমরা ‘ট্রান্সজেন্ডার অপারেশনকে’ সমর্থন করেন না। তিনি আরও বলেন, আমরা আপনার শিশুদের মনোভাব পরিবর্তনের প্রচেষ্টা প্রতিহত করব।
 
মিশিগানের ৩০ বছর বয়সী প্রসিকিউটর ওমর শাজিরা বলেন, পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের লিঙ্গ মতবাদে প্রভাবিত হতে দিতে চান না এবং তারা তাদের শরীর নিয়ে জীবন-পরিবর্তনকারী সিদ্ধান্ত নিতে চান না। মুসলিম সম্প্রদায় বুঝতে পারছে যে রিপাবলিকানদের রক্ষণশীল মূল্যবোধগুলো তাদের বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
 
ইয়েমেনি-আমেরিকান কর্মী সামরা লুকমান বলেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ডেমোক্র্যাটদের ভূমিকা অনেক মুসলিম আমেরিকানদের মধ্যে রিপাবলিকানদের প্রতি সমর্থন বাড়াচ্ছে, তবে রক্ষণশীল মূল্যবোধ রক্ষার বিষয়টিও একটি কারণ।
 
লুকমানের মতে, এই পরিবর্তন শুধু একটি বিষয়ভিত্তিক নয়; বরং এটি রক্ষণশীল মূল্যবোধ রক্ষা ও ডেমোক্র্যাটদের শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তৈরি হয়েছে।
 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.