যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৯তম স্বাধীনতা দিবস আজ (৪ জুলাই)। ১৭৭৬ সালের এই দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়েছিলেন মার্কিনীরা। প্রতি বছর জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান আর আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করে মার্কিনীরা।
১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত সেই স্বাধীনতা কিন্তু রাতারাতি আসেনি। ১৭৮৩ সালে প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেন আমেরিকার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে সাত বছর কেটেছিল যুদ্ধে; জীবন দিতে হয়েছিল ২৫ হাজার বিপ্লবী আমেরিকান এবং ২৭ হাজার ব্রিটিশ ও জার্মান সেনা।
১৮০০ সালের শেষের দিকে, ৪ জুলাই কেবল ক্যালেন্ডারে একটি তারিখের চেয়েও বেশি কিছু হয়ে ওঠে। ১৮৭০ সালে মার্কিন কংগ্রেস এটিকে ছুটির দিন ঘোষণা করে এবং ১৯৩৮ সালে এটি ফেডারেল কর্মচারীদের জন্য একটি বেতনভুক্ত ছুটির দিন হয়ে ওঠে।
আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু দেশ বলা হয়ে থাকে ফ্রান্সকে। আমেরিকার আকাশে আজকের যে স্ট্যাচু অব লিবার্টি উঁচু করে মশাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে তার পরিকল্পনা, নকশা, অর্থ সংগ্রহ এগুলো সবই হয়েছে ফ্রান্সের তত্বাবধানে।
দেশটির গৃহযুদ্ধে ও বিপ্লবে (১৭৭৫-৮৩) মার্কিনিদের বীরোচিত ভূমিকা, দাস প্রথার অবসান এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্মের পর বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ফ্রান্সের নাগরিকরা উপহার দিয়েছে এ ভাস্কর্যটি। এই স্ট্যাচু অব লিবার্টিকেই বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক। তাই স্বাধীনতার দিনটিকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয় স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীষ্মকালীন বিনোদনের সর্বোচ্চ রূপ প্রকাশ পায় ৪ জুলাই। কিছু উৎসব কয়েক দশক আগের। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে এই দিনটিকে পালন হয় আঞ্চলিক রীতিতে।
পেনসিলভেনিয়ার ওয়াশিংটন ক্রসিং হিস্টোরিক পার্কে যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির স্বয়ংচালিত প্রকৌশল প্রদর্শনের মাধ্যমে আমেরিকার বিপ্লবী যুদ্ধে অংশ নেওয়া চারটি দেশকে শ্রদ্ধা জানায় ক্লাসিক গাড়ির মালিকরা। ইউরোপের জাতিগতভাবে জার্মান অংশের সৈন্যরা আমেরিকান বিপ্লবের দুই পক্ষেই লড়াই করেছিল, যেখানে ৩০,০০০ সৈন্য ব্রিটিশদের পক্ষে লড়েছিল। আমেরিকার জন্য সেনা ও নৌ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল ফ্রান্স।
রেবেলস এবং রেডকোটস ক্লাসিক কার শো’তে প্রদর্শিত হয় ১৯৯৯ এবং তার আগেকার মডেলের সব গাড়ি। এ থেকে প্রাপ্ত অর্থ অনুদান দেওয়া হয় ঐতিহাসিক ও শিক্ষামূলক কর্মসূচিতে।
৪ জুলাই উদযাপনে প্রতি বছরই প্যারেড হয়, তবে অনেক অঞ্চলেই ব্যতিক্রমী প্যারেড হয় ঐতিহ্যগতভাবে। ওরেগনের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পশ্চিম শহর বেন্ডে আয়োজিত প্যারেডে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু থাকে পোষা প্রাণী। বেন্ডের ফোর্থ অফ জুলাই পেট প্যারেড দেখতে প্রতি বছর হাজির হয় ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ লোক। ১৯২৪ সাল থেকে প্রতি বছর হয়ে আসছে এ আয়োজন এবং শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারীর সময় বন্ধ ছিল তা।
টেক্সাসের অ্যাডিসন শহরের জনসংখ্যা ১৭ হাজারের কিছু বেশি, কিন্তু এই সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায় যখন অতিথিরা এয়ার শো, স্কাইডাইভিং এবং আতশবাজি প্রদর্শন করে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য আসে, যাকে দেশের অন্যতম সেরা আয়োজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে আমেরিকান পাইরোটেকনিকস অ্যাসোসিয়েশন।
তবে, আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসের মূল আকর্ষণ রাতের আতশবাজি প্রদর্শনী। এদিন আতশবাজির ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো আমেরিকার আকাশ। ১৭৭৭ সাল থেকে আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসের প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই আতশবাজি প্রদর্শনী।
এছাড়া, আজকের এই দিনটি উদযাপনে অন্যতম অনুষঙ্গ পারিবারিক পিকনিক ও বারবিকিউ পার্টি।