যে কৌশলে ইউক্রেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন জেলেনস্কি

0
203
মার্কিন বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে চড়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ছবি: রয়টার্স
গত বুধবার ভোরে ভলোদিমির জেলেনস্কিকে পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী শহর প্রজেমিসলের একটি রেলস্টেশনে দেখা যায়

গত বুধবার ভোরে ভলোদিমির জেলেনস্কিকে পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী শহর প্রজেমিসলের একটি রেলস্টেশনে দেখা যায়
ছবি: রয়টার্স

এই সফর নিয়ে কয়েক মাস ধরে আলাপ-আলোচনা হচ্ছিল। তবে চূড়ান্ত প্রস্তুতিটা নেওয়া হয় দ্রুততার সঙ্গে। এ নিয়ে ১১ ডিসেম্বর দুই প্রেসিডেন্ট কথা বলেন। তিন দিন পর জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। সফরের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই চূড়ান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়।

সফরের বিষয়ে দাপ্তরিকভাবে কোনো তথ্য না দেওয়ার বিষয়টি একেবারে অস্বাভাবিক কিছু নয়। শান্তিকালীন সময়েও যেকোনো প্রেসিডেন্টের সফর ঘিরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু একজন যুদ্ধকালীন নেতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকিটা বেশিই থাকে।

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র এড়াতে ট্রেন–যাত্রা

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হুমকির ফলে ইউক্রেনের আকাশসীমায় উড়োজাহাজে যাত্রা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই জেলেনস্কি ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে গোপনে ট্রেনে যাত্রা করেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার ভোরে তাঁকে পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী শহর প্রজেমিসলের একটি রেলস্টেশনে দেখা যায়।

পোলিশ টিভিতে সম্প্রচার করা একাধিক ছবিতে দেখা যায়, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি প্ল্যাটফর্ম ধরে হাঁটছেন জেলেনস্কি। পেছনেই রয়েছে ইউক্রেনের একটি নীল-হলুদ রঙের ট্রেন। পরে তাঁরা অপেক্ষমাণ একটি গাড়িবহরে গিয়ে ওঠেন। গাড়িবহরে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পছন্দের কয়েকটি কালো শেভ্রলেট সাবারবান মডেলের গাড়িও।

যুদ্ধকালীন নেতা হিসেবে ওয়াশিংটনেও ভলোদিমির জেলেনস্কির নিরাপত্তায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়

যুদ্ধকালীন নেতা হিসেবে ওয়াশিংটনেও ভলোদিমির জেলেনস্কির নিরাপত্তায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়
ছবি: রয়টার্স

অনেক পশ্চিমা নেতা ও কর্মকর্তা কিয়েভে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ট্রেনে চড়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এই প্রথম তিনি দেশের বাইরে গেলেন।

কিছুক্ষণ পরেই ফ্লাইট ডাটায় দেখা যায়, মার্কিন বিমানবাহিনীর একটি বোয়িং সি-৪০বি উড়োজাহাজ প্রায় ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমের রজেসজো বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করছে। এই উড়োজাহাজেই জেলেনস্কি ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

নিরাপত্তায় গোয়েন্দা ও যুদ্ধবিমান

উড়োজাহাজটি উত্তর-পশ্চিমে যুক্তরাজ্যের দিকে রওনা হয়। তবে এটি উত্তর সাগরের আকাশসীমায় প্রবেশের আগে ওই এলাকার নিরাপত্তা খতিয়ে দেখে ন্যাটোর একটি গোয়েন্দা বিমান। উত্তরে সাগর রাশিয়ার সাবমেরিনের টহলের জন্য পরিচিত।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের একটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ইংল্যান্ডের ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে। জেলেনস্কির যাত্রার অংশ হিসেবে উড়োজাহাজটিকে নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যায় যুদ্ধবিমানটি।

শেষ নাগাদ ওয়াশিংটনের সময় দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর কাছেই জেলেনস্কিকে বহনকারী উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের প্রায় ১০ ঘণ্টা পর অবতরণ করে। অবশ্য জেলেনস্কির পুরো যাত্রার সময়টা আরও অনেক বেশি।

ওয়াশিংটনেও অতিরিক্ত সতর্কতা

ওয়াশিংটনে পৌঁছালে জেলেনস্কিকে নিরাপত্তা দেয় সিক্রেট সার্ভিস। সব রাষ্ট্রপ্রধানের সফরের ক্ষেত্রেই এমনটা করা হয়ে থাকে। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত একটি দেশের নেতা হিসেবে জেলেনস্কির নিরাপত্তায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।

একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমরা খুব সচেতন যে এ দেশে রাশিয়ার জনবল আছে এবং কিছু করার চেষ্টা করতে পারে। আমরা জানি, কী ঝুঁকি আছে।’

দৃশ্যত জেলেনস্কির সফরটি সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নাগাদ তিনি ইউরোপের মাটিতে ফিরেছেন। নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার সঙ্গে বৈঠক করতে দেশটিতে যাত্রাবিরতি দিয়েছেন তিনি।

ইতিমধ্যে জেলেনস্কি সীমান্ত অতিক্রম করে ইউক্রেনে প্রবেশ করেছেন। তবে তিনি নিরাপদে কিয়েভে ফেরার পরই যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা নিরুদ্বেগ হতে পারবেন। এক কর্মকর্তা এবিসি নিউজকে বলেন, ‘পুতিন ও ক্রেমলিন জানে, তাঁকে (জেলেনস্কিকে) দেশে ফিরে যেতে হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.