যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হুমকি

0
15
ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের আদমপুর বিমান ঘাঁটিতে মঙ্গলবার বিমান বাহিনীর সদস্যের উদ্দেশে ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ছবি: এএফপি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চললেও একে অপরকে হুমকি দিয়েই যাচ্ছে দুই দেশ। যুদ্ধবিরতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মঙ্গলবার পাকিস্তান বলেছে, ভবিষ্যতে নয়াদিল্লি আবার ‘আগ্রাসন’ চালালে পাল্টা জবাব দিতে পিছপা হবে না ইসলামাবাদ। অন্যদিকে পাকিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদ চালানো হলে দেশটি ধ্বংস হয়ে যাবে বলে হুমকি দিয়েছে ভারত।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত ও পাকিস্তান। টানা চার দিন পাল্টাপাল্টি হামলার পর ১০ মে বিকেলে যুদ্ধবিরতিতে একমত হয় দুই দেশ। পেহেলগামের ওই হামলায় ইসলামাবাদের মদদ ছিল বলে অভিযোগ নয়াদিল্লির। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পাকিস্তান।

যুদ্ধবিরতি চললেও দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি থেমে নেই। সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ‘সন্ত্রাসবাদের’ সঙ্গে পাকিস্তানকে জড়িয়ে কথা বলেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের মদদ বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে আবার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। এ সময় পারমাণবিক অস্ত্রের তোয়াক্কাও করা হবে না।

এরপর মঙ্গলবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মোদির দেওয়া ‘উসকানিমূলক ও উত্তেজনাকর’ বক্তব্য দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে ইসলামাবাদ। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রচেষ্টার মধ্যে এমন বক্তব্য উত্তেজনা বাড়াতে পারে।

ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির যে সমঝোতা হয়েছে, পাকিস্তান সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং উত্তেজনা কমাতে দরকারি পদক্ষেপ নেবে ইসলামাবাদ। তবে ভবিষ্যতে যদি ভারত কোনো আগ্রাসন চালায়, তাহলে তা দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করা হবে।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানায়, যুদ্ধবিরতির পর মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো জনসমক্ষে ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিন ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের আদমপুর বিমানঘাঁটিতে বিমানবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তানের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদ চালানো হলে আপনারা ধ্বংস হয়ে যাবেন।’

ভারতের ওপর আবার হামলা হলে দেশটি কী জবাব দেবে, সে প্রসঙ্গেও কথা বলেন মোদি। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক কোনো দেশের সরকার এবং সন্ত্রাসবাদের পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে আমরা কোনো পার্থক্য করব না। আমরা তাদের ডেরায় প্রবেশ করব এবং এমনভাবে আঘাত হানব, যেন তারা বেঁচে থাকার কোনো সুযোগ না পায়।’

ট্রাম্পের ‘হুমকি’র কথা অস্বীকার নয়াদিল্লির

যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতায় বড় ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার বিকেলে যুদ্ধবিরতির খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম সামনে এনেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই। পরে সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে তিনি বলেন, তাঁর কারণেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ’ বন্ধ হয়েছে।

সংঘাত থামাতে দুই দেশকে বাণিজ্য নিয়ে চাপ দিয়েছিলেন—এমন দাবিও করেছেন ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘আমি বলেছিলাম, আমরা তোমাদের সঙ্গে (ভারত ও পাকিস্তান) অনেক বাণিজ্য করতে চাই। তাই এটি (সংঘাত) বন্ধ করো। বন্ধ করলে আমরা বাণিজ্য করব। আর যদি বন্ধ না করো, তাহলে আমরা কোনো বাণিজ্য করব না।’

তবে ট্রাম্পের এমন কোনো হুমকির কথা নাকচ করেছে নয়াদিল্লি। সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, ৯ মে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনালাপ করেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। এ ছাড়া ৮ ও ১০ মে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে আলাপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তবে এ সময় বাণিজ্য নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি।

মঙ্গলবার সৌদি আরবে সৌদি–মার্কিন বিনিয়োগ ফোরামে যোগ দিয়েও ভারত–পাকিস্তান প্রসঙ্গে কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফোরামে বক্তব্য দেওয়ার সময় মার্কো রুবিওকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, তারা (ভারত ও পাকিস্তান) প্রকৃতপক্ষেই কাছাকাছি আসছে। হয়তো আমরা তাঁদের আরও কিছুটা কাছাকাছি আনতে পারব, রুবিও।’

দুই পক্ষের হতাহত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘাতে কতজন নিহত হয়েছেন, মঙ্গলবার তার একটি হিসাব দিয়েছে ইসলামাবাদ। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ভারতে হামলায় পাকিস্তানের মোট ৫১ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১৯৯ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ১১ জন সেনাসদস্য রয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ৭৮ জন। নিহত বেসামরিক মানুষের সংখ্যা ৪০। তাঁদের মধ্যে ৭ নারী ও ১৫ শিশু রয়েছে।

পাকিস্তানে নিহত এই ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মঙ্গলবার একটি বিবৃতি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ভারতের আগ্রাসন পাকিস্তানের জনগণের শক্তি আরও বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আরও একতাবদ্ধ হয়েছে। ভারতের শত্রুতার জবাব দেওয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত আছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী।

পেহেলগাম হামলার জেরে ৬ মে রাতে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান চালায় ভারত। এর পর থেকে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ১০ মে ভোরে ভারতে চালানো পাকিস্তানের অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন বুনইয়ান-উন-মারসুস’। এই চার দিনে নিজেদের কতজন নিহত হয়েছেন, তার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেনি ভারত। ১০ মে দেশটির সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের হামলায় তাদের ৫ সেনাসদস্য ও ১৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশ যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ডন–এর খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আগের চেয়ে আমরা ভালো অবস্থানে রয়েছি। আশা করি যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে।’

রয়টার্স

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.