‘তুমি কি ধোঁয়ার গন্ধ পাচ্ছ?’ একে-অপরকে এখন এই প্রশ্নটিই করছে কানাডার লোকেরা। দেশটিতে গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরুতেই অনেক এলাকা জ্বলছে দাবানলে যেটিকে বলা হচ্ছে নজিরহীন। কানাডায় এখন শত শত দাবানল জ্বলছে। ১৫০টিরও বেশি জায়গায় আগুন জ্বলছে। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তের উত্তরে দাবানল থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে নিউইয়র্ক সিটি ও ওয়াশিংটন ডিসিতেও ধোঁয়াশা বাতাসে ভরে গেছে আকাশ। নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পাবলিক স্কুলগুলোতে বাতিল করা হয়েছে বাইরের কার্যক্রম। লাখো মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর দাবানলের প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দাবানল নিয়ন্ত্রণে অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের আপ্রাণ চেষ্টার পরও এখন পর্যন্ত ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন হেক্টরের বেশি এলাকা পুড়ে গেছে। এসব এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খবর- দ্য গার্ডিয়ান ও আলজাজিরা
স্বাস্থ্যঝুঁকি: কানাডার মন্ট্রিলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পপুলেশন অ্যান্ড গ্লোবাল হেলথের সহযোগী অধ্যাপক জিল বামগার্টনার বলেন, দাবানলের ফলে কানাডায় দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে। এতে চোখ জ্বালাপোড়া এবং নাক দিয়ে পানি পড়া থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী হার্ট ও ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি নানা সমস্যা হতে পারে।
দাবানল এলাকার আকাশ অনেক দূর পর্যন্ত ধোঁয়ায় ভরে গেছে। শুধু তাই নয়, যেখানে দাবানল নেই সেখানকার জনসাধারণও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে। কর্তৃপক্ষকে এ সমস্যা সমাধানে আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
‘খুব ধোঁয়াটে আকাশে ভয়ঙ্কর দৃশ্য তৈরি হয়েছে। কাঠ পোড়ানোর গন্ধও আছে’ এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলছেন ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক কানাডার নির্বাহী পরিচালক ক্যারোলিন ব্রুইলেট। তিনি বলছেন, এখানে এখন জলবায়ু সংকট ঘটছে।
এদিকে দাবানলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্বাস্থে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ছবিগুলোতে দেখা যায়- অটোয়া, মন্ট্রিল ও টরন্টোর আকাশে কমলা রঙ। যেখানে সিএন টাওয়ার ও কানাডার বৃহত্তম শহর ডাউনটাউন স্কাইলাইনের ওপর ঘন কুয়াশা দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ধোঁয়া: কানাডার দাবানলের ধোঁয়া মে মাস থেকে দক্ষিণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসছে। পশ্চিমের প্রদেশগুলো থেকে পূর্বে নোভা স্কটিয়া এবং কুইবেক পর্যন্ত ছড়িয়েছে ধোঁয়া। আইকিউ এয়ারের মতে, বুধবার নিউইয়র্ক সিটির বায়ুর মান বিশ্বের যেকোনো বড় শহরের চেয়ে খারাপ ছিল। দ্বিতীয় সবচেয়ে খারাপ ছিল পাকিস্তানের লাহোর। যেখানে পরবর্তী বায়ুমানে সবচেয়ে খারাপ মার্কিন শহর ডেট্রয়েট, মিশিগান ছিল ১৩তম স্থানে।
কানাডার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব এবং মধ্য-পশ্চিম রাজ্যগুলোতে বায়ু দূষণের সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বড় শহরের আকাশ ঘোলাটে বাদামি রঙ ধারণ করে। বাতাসে ক্ষতিকারক দূষণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নিউইয়র্ক, ম্যাসাচুসেটস ও কানেকটিকাটসহ পূর্বের রাজ্যগুলোতে বায়ু মানের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
উত্তর আমেরিকার লাখো মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর দাবানলের প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাবলিক স্কুলগুলোতে বাতিল করা হয়েছে বাইরের কার্যক্রম।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে ধোঁয়ার গন্ধ পাওয়া যায়। কারণ আকাশ কমলা-বাদামী রঙ ধারণ করে। বুধবারও গন্ধ ছিল। শহরের বাসিন্দাদের ফেস মাস্ক পরতে পরামর্শ দেওয়া হয় যা করোনভাইরাস মহামারি কমে যাওয়ার পর অনেকেই ব্যবহার বন্ধ রেখেছিল।
ক্লিভল্যান্ড, ওহাইও, বাফেলো, নিউইয়র্ক অঞ্চলজুড়ে আকাশ ধোঁয়াশা হলে নিউ জার্সির প্রায় পুরো রাজ্য বায়ুমানের সতর্কতার মধ্যে ছিল। ধোঁয়া দক্ষিণ ক্যারোলিনা পর্যন্ত দক্ষিণে চলে যায়। এই অবস্থায় মানুষজনকে বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বলছেন, ধোঁয়াটে কুয়াশা আকাশকে অস্পষ্ট করে রেখেছে। আমরা এটি দেখতে পাচ্ছি, ধোঁয়াটে গন্ধ পাচ্ছি। এটি উদ্বেগজনক। এটি আমাদের শহরের জন্য একটি নজিরবিহীন ঘটনা। নিউইয়র্কবাসীদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তিনি নগরের বাসিন্দাদের বাসার ভেতরে থেকে দরজা জানালা বন্ধ করে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। মানুষজনকে বাড়ির বাইরে কম বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, যদিও প্রথমবার আমরা এই মাত্রায় এ রকম কিছু অনুভব করেছি। তবে এটি শেষ নয়। জলবায়ু পরিবর্তন এই পরিস্থিতিকে ত্বরান্বিত করেছে। আমাদের অবশ্যই বায়ুর মান উন্নত করতে হবে।
এরিক অ্যাডামস বলেন, যাদের আগে থেকে হার্ট বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা, সেই সঙ্গে শিশু ও বয়স্কদের এই সময়ে বাড়ির ভেতরে থাকা উচিত।