যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি কমলেও চীনে বেড়েছে, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব

0
22
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, ছবি: রয়টার্স

ভারত চীনের রাজনৈতিক সম্পর্ক ভালো না হলেও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই জোরদার ছিল। তবে চলতি বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে শুল্কযুদ্ধ শুরু করার পর ভারত-চীন বাণিজ্য সম্পর্কে আরও গতি এসেছে।

পরিষ্কারভাবে বললে, চীন-ভারত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের পালে হাওয়া লেগেছে। ফলে মার্কিন বাজারে রপ্তানি কমলেও চীনের বাজারে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বছরের প্রথমার্ধে সামগ্রিকভাবে ভারতের রপ্তানি বেড়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকের হিসাবে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রপ্তানি করেছে ভারত। খবর ইকোনমিক টাইমস ও ফরচুন ইন্ডিয়ার

ভারতের সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসসহ টানা সাত মাস চীনে ভারতের রপ্তানি বেড়েছে। ভারতের চলতি অর্থবছরের (এপ্রিল থেকে শুরু) প্রতি মাসে ভারতের রপ্তানি বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের জেরে ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে তাঁরা নিশ্চিতভাবে অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়েছেন। সেই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে নানা অনিশ্চয়তার মধ্যেও বছরের প্রথম দুই ত্রৈমাসিকে ভারতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ শতাংশের বেশি।

ভারতের সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবর মাসে চীনে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি ৪২ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে এই রপ্তানির পরিমাণ গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এই সময় ভারত মোট ১ হাজার ৩ কোটি ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করেছে।

চীনের বাজারে রপ্তানি হওয়া পণ্য তালিকার শীর্ষে আছে পেট্রোলিয়াম পণ্য, টেলিকম যন্ত্রাংশ ও মেরিন গুডস। এ বিষয়ে ভারতের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গত কয়েক বছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে এটা সবচেয়ে স্থিতিশীল পর্যায়। বিশেষ করে যখন বৈশ্বিক চাহিদা নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে, তখন চীনে ভারতের রপ্তানি বৃদ্ধি ইতিবাচক বিষয়।’

পেট্রোলিয়াম পণ্যের রপ্তানি সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এপ্রিল মাসে তা বেড়েছে ১১ শতাংশ, জুলাই মাসে বেড়েছে ২৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বর মাসে বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। এই বৃদ্ধির জেরে এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে ভারতীয় পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চতুর্থ বৃহত্তম গন্তব্য হয়ে উঠেছে চীন।

এদিকে চীনের বাজারে রপ্তানি বাড়লেও চলতি অর্থবছরে মার্কিন বাজারে ভারতের রপ্তানি কমেছে। মূলত অনিশ্চয়তা ও উচ্চ শুল্কের কারণে এই পতন, যদিও অক্টোবর মাসে, অর্থাৎ ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি সেপ্টেম্বরের তুলনায় বেড়েছে। যদিও গত বছরের অক্টোবর মাসের তুলনায় তা কম।

ভারতের বাণিজ্যবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের তথ্যানুসারে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে চার মাস ধরে কমেছে। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের রপ্তানি ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে তারা। সম্প্রতি এত অল্প সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের রপ্তানি আর কখনো এতটা কমেনি।

প্রথম ছয় মাসে সর্বোচ্চ রপ্তানি

বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভারত রপ্তানি করেছে মোট ২০৯ বিলিয়ন বা ২০ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য। দ্বিতীয় প্রান্তিকে করেছে ২০৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ২০ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারের পণ্য। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে এটাই এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রপ্তানি; অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে রপ্তানির ক্ষেত্রে সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে ভারত।

সার্বিকভাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ভারতের রপ্তানি ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট রপ্তানি হয়েছে ৪১৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৪১ হাজার ৮৯০ কোটি ডলারের পণ্যে, আগের বছরের তুলনায় যা ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সফলতা থেকে বোঝা যায়, ভারতের রপ্তানি ব্যবস্থার শক্তি কতটা বেড়েছে। লজিস্টিকস উন্নয়ন, বন্দর সক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানি সহজীকরণ, কাঠামোগত সংস্কার ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতার মাধ্যমে এই সফলতা অর্জিত হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভূমিকা পালন করেছে। তার মধ্যে আছে রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, আধুনিক সরবরাহ শৃঙ্খল নিশ্চিত করা ও স্মার্টফোন রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

বিশ্লেষকদের মতে, সরকার নীতিসংস্কার, বাণিজ্য চুক্তি ও লজিস্টিকস উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের সমর্থন দিচ্ছে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক এই অর্জন ভবিষ্যতে ভারতের পালে আরও হাওয়া দেবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.