আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যত খুশি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবে। এতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোনো আপত্তি নেই। সফররত ইইউর প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলকে এ কথা জানিয়েছে ইসি।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করে ইইউর প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, বৈঠকে ইইউর প্রতিনিধি দলটি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে ইসির কাছে জানতে চেয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে কমিশনার রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান এবং ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রিকার্ডো শেলেরির নেতৃত্বে ইইউ প্রতিনিধিদলে ছিলেন পাঁচজন।
বৈঠক শেষে রিকার্ডো শেলেরি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে তাঁরা দুই সপ্তাহের জন্য এসেছেন। মূল্যায়ন শেষে তাঁরা ইইউর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের কাছে একটি প্রতিবেদন দেবেন। এর আলোকে ইইউর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোটের পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
পরে বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, ইইউর প্রতিনিধিদল প্রধানত নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে ইসির কাছে জানতে চেয়েছে। বিশেষ করে ভোটার, ভোটকেন্দ্র, পর্যবেক্ষক, সিসি ক্যামেরা নিয়ে তারা জানতে চেয়েছে। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম কি না, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে। ইসি বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছে। ইইউর প্রতিনিধিদল সন্তুষ্ট।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে কী কী প্রস্তুতি নিতে হয়, ইসি কী করবে তা জানতে চেয়েছে ইইউর প্রতিনিধিদল। কমিশন বলেছে, তারা যতসংখ্যক ইচ্ছে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে, এর কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। আবেদনের জন্য সময়সীমা আছে কি না, তা জানতে চেয়েছে তারা। ইসি বলেছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন এলে সুবিধা হয়। কারণ, আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের বিষয়ও রয়েছে। তারা (ইইউ) যদি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠায়, যত খুশি তত, কোনো আপত্তি নেই নির্বাচন কমিশনের।
ইইউর প্রতিনিধিদলের কারিগরি সদস্যরা ইসির আইনি বিষয়গুলো নিয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আবার বৈঠক করবেন বলে জানান অশোক কুমার দেবনাথ।
এক প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে এখন পর্যন্ত ৯১১টি নির্বাচন হয়েছে। এতে সন্তোষ রয়েছে ইইউর প্রতিনিধিদলের। পরিবেশ নিয়ে এখন পর্যন্ত ইইউর প্রতিনিধিদল সন্তুষ্ট। তবে তারা আরও আলোচনা করবে। ১৮ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে তারা আবার ইসির কারিগরি দলের সঙ্গে বসবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইসির বিষয় নয়। এ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটে আনার বিষয়ে ইইউর প্রতিনিধিদল কিছু জানতে চায়নি। নির্বাচনকালীন সরকার ও কোনো দলকে ভোটে আনার বিষয় বৈঠকের আলোচনায় আসেনি।
ইসির অতিরিক্ত সচিব জানান, ইসির সক্ষমতা নিয়ে ইইউর প্রতিনিধি দল সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি কিছুই প্রকাশ করেনি। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে কি না, তা নিয়েও তারা জানতে চায়নি।
বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ ও নির্বাচন-পূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ইইউর নির্বাচনসংক্রান্ত তথ্যানুসন্ধানী দলটি গত শনিবার ১৬ দিনের সফরে ঢাকায় আসে।