ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বাটাজোর বিএম উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে থই থই পানি। বিদ্যালয়ের ফটক থেকে কক্ষে যাতায়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে বেঞ্চের সাঁকো। এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। অন্যদিকে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গৌরীপুর সরকারি কলেজ মাঠে গতকাল বুধবার শোক দিবস উপলক্ষে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা গণভোজের আয়োজন করেন।
ভালুকার বাটাজোর বিএম উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবেন বাটাজোর সোনার বাংলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। জলাবদ্ধতার বিষয়ে বিএম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বর্তমানে এক দিন বৃষ্টি হলে বিদ্যালয়ের মাঠে দুই থেকে আড়াই ফুট পানি জমে। বিদ্যালয়ের পাশের নিচু জায়গা ভরাট করে ফেলার কারণে বাইরের পানিও মাঠে চলে আসে।
বৃষ্টির মৌসুমে আড়াই থেকে তিন মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ পানিতে নিমজ্জিত থাকে। ২০২১ সাল থেকে এ অবস্থা চলে আসছে। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। বর্তমানে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ক্লাস বন্ধ আছে।
গতকাল বেলা তিনটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির পুরো মাঠ পানিতে থই থই করছে। ফটক থেকে কক্ষে যেতে বাঁ পাশে দুটি আর ডান পাশে ২১টি বেঞ্চ পেতে রাখা হয়েছে। বেঞ্চের ওপর হেঁটে ডান পাশে এগিয়ে দেখা যায় কক্ষের বাইরে দিয়ে তালা লাগানো। জানালা দিয়ে দেখা যায়, কক্ষের ভেতরে পানি নেই, তবে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। বদ্ধ কক্ষে ঘুরছে পাখা। মাঠে হাঁটুসমান পানি।
স্থানীয় মোজাম্মেল হক নামের এক ব্যক্তি বলেন, বিদ্যালয়ের পানি বের হওয়ার নালাগুলো মাটি পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। তাই পানি বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদ্যালয়ের জলাবদ্ধতা দূর করতে এলাকাবাসীর পক্ষে সম্প্রতি তিনি ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভালুকার ইউএনও গত সোমবার পরিদর্শনে এসেছিলেন।
কাচিনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ইউএনওর নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের আশপাশের বন্ধ হওয়া নালাগুলো থেকে মাটি সরানো হয়েছে। আগের চেয়ে পানি অনেকটা কমেছে। আশপাশের জমির চেয়ে বিদ্যালয়ের মাঠ নিচু। বিদ্যালয়সহ আশপাশের ৭০-৮০ একর জমির পানিনিষ্কাশন হতে সময় লাগবে।
কলেজ মাঠে রান্না ও গণভোজ
এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগের দিন গণভোজের আয়োজন করায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলেন, গতকাল গৌরীপুর সরকারি কলেজে ডিগ্রি (পাস) কোর্সের একটি পরীক্ষা ছিল। আজ বৃহস্পতিবার থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। এ অবস্থায় রান্না ও খাবারের উচ্ছিষ্ট পড়ে থাকলে পরীক্ষার্থীরা বিব্রত হবে। সেগুলো পচে গন্ধ বের হবে।
যুবলীগের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গৌরীপুর উপজেলা যুবলীগের উদ্যোগে গতকাল আলোচনা সভা ও শোক মিছিল হয়। আলোচনা সভাটি গৌরীপুর পৌর শহরের হারুন পার্কে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু রান্না ও গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে গৌরীপুর সরকারি কলেজে। সকাল থেকে মাঠে চলে রান্নার আয়োজন। পরে বিকেল পাঁচটায় ভোজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের এক শিক্ষক বলেন, যুবলীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মোর্শেদুজ্জামান সেলিম। তিনি গৌরীপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। ফলে কলেজ মাঠে এসব আয়োজন করা হয়েছে।
গৌরীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাহমুদা ইয়াসমিন রোজী বলেন, গৌরীপুর সরকারি কলেজের মাঠটি অনেক বড়। এ মাঠে প্রায়ই স্থানীয় বাসিন্দাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে রান্না ও ভোজের আয়োজন হয়। এটি অনেকটা সামাজিক রীতির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে আয়োজকেরাই সবকিছু পরিষ্কার করে দেন। এতে শিক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা হয় না।
মোর্শেদুজ্জামান সেলিম এ ব্যাপারে বলেন, ‘বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় আমরা কলেজ মাঠে রান্না ও ভোজের আয়োজন করেছি। রান্না ও ভোজ শেষে আমাদের পক্ষ থেকে সবকিছু পরিষ্কার করে দেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হবে না।’