‘লও ঠেলা’, ‘আনোয়ার ওরফে স্যুটার আনোয়ার’ ও ‘আকাশ’ গ্রুপের পর এবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় আতঙ্ক হয়ে উঠেছে ‘আই ডোন্ট কেয়ার’ (আইডিসি)। এই সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধান মো. সোহেল। তাদের স্লোগান ‘কিং অব আইডিসি সন অব মাফিয়া’। বর্তমানে বছিলা, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান এবং মিরপুরের কিছু অংশে সক্রিয় এই সন্ত্রাসী গ্রুপ; যারা সাধারণ মানুষের আতংক হয়ে উঠেছে। হামলার ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করে না কেউ।
জানা গেছে, আইডিসি গ্রুপের সক্রিয় সদস্য সোহেল, আতিয়ার, রবিউল ও আদাবর ১০ নম্বরের আকাশ। আনোয়ার গ্রুপের সদস্য ভাগিনা নাঈম, রাফাত, তুষার, ইউসুফ, তুন্ডা বাবু, পাগলা নাসির ও আহমেদ। এই দুই গ্রুপ ‘কিং অব মোহাম্মদপুর’ নামেও পরিচিত। এদের মধ্যে কয়েকজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছে। তবে বাকিরা এখনও অধরা।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, এসব সন্ত্রাসীর নির্দিষ্ট পেশা নেই। কেউ অটোরিকশাচালক, কেউ লেগুনা চালক। তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। হাত কেটে নিয়ে টিকটক করার ঘটনায় সামনে আসে ‘স্যুটার আনোয়ার গ্রুপ’। গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল রক্তচোষা জনি ও আনোয়ার। পরে ঝামেলা হওয়ায় নিজেদের অনুসারী নিয়ে আলাদা হয়ে যায় তারা। গত ২৪ জুলাই জনির ওপর হামলা করতে আসে আনোয়ার গ্রুপ। সেদিন তাকে না পেয়ে জনির অনুসারী সাকিল এক্সা সেন্টুর দুই হাতের কব্জি কেটে ফেলে। এই গ্রুপের হাতে এ পর্যন্ত পাঁচজন পঙ্গু হয়েছে, যারা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে আনোয়ার গ্রুপের হামলার শিকার হয় জনির অনুসারী পশু আলমগীর। তার হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে টিকটক করে তারা। দ্বিতীয় হামলার শিকার সেন্টু। পরে হামলা শিকার হয়েছে আরমান হোসেন, রুহুল আমিন ও সাজ্জাদ।
হামলার সময় দেখা আনোয়ারের ভয়ংকর চেহারা ভুলতে পারেননি অনেক প্রত্যক্ষদর্শী। তাদের ভাষ্য, আনোয়ার খুব দ্রুত হামলা চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। এ ছাড়া আক্রমণের সময় তার অনুসারীদের উদ্দেশ্যে বলে–প্রাণে মারিস না শিক্ষা দে, আমার নাম মনে থাকবে।
ভুক্তভোগী সেন্টুর বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘জনির সঙ্গে চলাফেরা করায় আমার ভাইকে কুপিয়ে জখম করেছে আনোয়ার গ্রুপের লোকজন। বর্তমানে বাসায় আছে সেন্টু। তবে অবস্থা ভালো না। এদিকে আমি কথা বলায় সন্ত্রাসীরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।’
রুহুল আমিনের স্ত্রী নাদিয়া বেগম বলেন, ‘ঘটনার দিন আমার স্বামী বাসা থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে অফিসের নিচে যায়। এ সময় আনোয়ারসহ কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরে টাকার ব্যাগ নিয়ে নেয়। বাঁধা দেওয়ায় রুহুলের বাঁ হাতে কোপ দেয়। এতে তার হাতের দুটি রগ কেটে গেছে। আমার স্বামীকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে সাজ্জাদ নামে একজনকে কুপিয়েছে তারা। তার দুটি হাতই এখন অচল।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, আনোয়ার, সোহেল ও নাঈমসহ সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করছে না। এতে ছিনতাই ও হামলার ঘটনা বাড়ছে। এ ছাড়া, সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। মামলা করলেই হামলা শিকার হতে হবে–এই ভয়ে কেউ মামলাও করতে চায় না।
এদিকে, মোহাম্মদ এলাকার সন্ত্রাসীদের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে র্যা ব ও পুলিশ। আনোয়ার, নাঈম ও সোহেলের বিষয়ে র্যা ব বলছে–তারা অবৈধপথে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে। আর পুলিশ বলছে–তারা দেশেই আছে। অভিযানের কারণে গাঁ ঢাকা দিয়েছে। এরই মধ্যে গত ২ অক্টোবর মোহাম্মদপুর এলাকায় সাজ্জাদ ও রুহুল আমিন নামে দু’জনকে কুপিয়ে জখম করেছে আনোয়ার। এতে আনোয়ার ও নাঈমকে অংশ নিতে দেখা গেছে। তাদের পাশে ছিল সোহেল। এ ঘটনার মামলায় তাদের নাম রয়েছে। সম্প্রতি পুলিশের অভিযানে ১৪ জন ও র্যা বের অভিযানে আকাশ গ্রুপের পাঁচজনসহ মোট ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে আনোয়ার ও আইডিসি গ্রুপের প্রধানরা।
তেজগাঁও মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আজিজুল হক বলেন, পুলিশের কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। আনোয়ার পুলিশের অভিযানের পর গাঁ ঢাকা দিয়েছে। সে দেশেই আছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর এলাকায় অতিরিক্ত টহল বাড়ানো হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকায় যে কয়েকটি কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে, তাদের গ্রেপ্তারে র্যাব অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযানের মুখে অপরাধীরা পালিয়েছে। র্যাব গোয়েন্দারা সক্রিয় রয়েছে, তাদের যেখানেই পাওয়া যাচ্ছে সেখান থেকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া আনোয়ার গ্রুপের প্রধান আনোয়ার দেশের বাইরে চলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।