‘মোকা’ মোকাবিলা

0
180

প্রবল ঘূর্ণিঝড় হইতে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হইয়াছে ‘মোকা’। শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়া অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ ইতোমধ্যে উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হইয়া মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হইয়াছে। ঐ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যাহা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়িতেছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাইয়া যাইতে বলা হইয়াছে। তাহার সহিত উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকিয়া সাবধানে চলাচল করিবার পরামর্শ দেওয়া হইয়াছে। অচিরেই যে বিপদ সংকেতের মাত্রায় বড়সড় উল্লম্ফন ঘটিবে– উহাতে সন্দেহ নাই।

 প্রবল শক্তিতে আসছে ‘ মোকা’

বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তর- পশ্চিম দিকে অগ্রসর হইতে পারে এবং রবিবার মধ্যাহ্নে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের কায়াকপুরের মধ্যে ঘণ্টায় ১৫০ হইতে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে আছড়াইয়া পড়িতে পারে। তখন উহার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটারও হইতে পারে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, অদ্য শনিবার অপরাহ্ণেই বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় মোকার প্রভাব আরম্ভ হইবে। কারণ এই সময়ে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ বাংলাদেশ উপকূলে আসিয়া পড়িবে। কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশের মতে, টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ১০-১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হইতে পারে। কক্সবাজারে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হইতে পারে।

তবে ভরসার বিষয়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা ইতোমধ্যে বৈশ্বিক স্বীকৃতি লাভ করিয়াছে। গত শতকের ৯০ দশকের পর হইতে ক্রমহ্রাসমান প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত প্রাণহানিও উহার সাক্ষ্য বহন করিতেছে। ঘূর্ণিঝড় হইতে সুরক্ষায় স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্ররূপে ব্যবহারের উদ্যোগও যথেষ্ট প্রশংসনীয়। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা যে প্রক্রিয়ায় মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে লইয়া যান, উহার উদাহরণও বিশ্বে বিরল। এই সকল কিছুর ছাপ মোকা মেকাবিলায়ও থাকা স্বাভাবিক। শুক্রবার সমকালের মুদ্রণ সংস্করণের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হইয়াছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানাইয়াছেন, উপকূলীয় এলাকায় যত আশ্রয়কেন্দ্র আছে, সকলই প্রস্তুত রাখিতে বলা হইয়াছে। তথায় প্রেরণ করা হইয়াছে পর্যাপ্ত শুকনা খাদ্য। প্রতিমন্ত্রী আশাবাদী, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর হইতে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ক্ষয়ক্ষতি শূন্য পর্যায়ে’ থাকিতে পারে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, পটুয়াখালী ও খুলনা হইতে প্রতিনিধিদের প্রেরিত সংবাদ হইতেও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন মোকা মোকাবিলায় প্রস্তুত বলিয়া মনে হইয়াছে। বর্তমানে সমগ্র দেশে চূড়ান্ত মাধ্যমিক পরীক্ষা চলমান। ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ গতিবিধি জানিয়া রবিবারের পরীক্ষা স্থগিত করিবার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতন বলিয়াও আমরা জানি।

তবে শুক্রবার সমকালের অন্য এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন উপকূলে বিশেষত চট্টগ্রাম ও খুলনার বেশ কিছু বেড়িবাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে বলিয়া যে সংবাদ দেওয়া হইয়াছে, উহাতে আমরা উদ্বিগ্ন। ইহার কারণ হইল, উক্ত পরিস্থিতিতে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশে প্রাণের ক্ষতি না হইলেও সম্পদের ক্ষতি হইতে পারে। বর্তমানে বোরো ধান কর্তনের মৌসুম চলিতেছে, যখন দেশের সিংহভাগ ধান উৎপাদিত হয়। তাই বেড়িবাঁধসমূহের ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ কাম্য। আমাদের প্রত্যাশা, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি যথাযথভাবে মোকাবিলায় সরকারি পর্যায়ে যেমন কোনো ফাঁক থাকিবে না, তেমনি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাও যাহারা দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতোপূর্বে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়াছে– দায়িত্ব পালনে কোনো অবহেলা করিবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.