গত কয়েক দিনে লিওনেল মেসি ও পিএসজিকে ঘিরে ঝড়ই বয়ে গেল। অনুমতি না নিয়ে মেসির সৌদি আরব যাওয়া থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। এরপর উত্তাপ আরও বাড়ে পিএসজি মেসিকে দুই সপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ করলে।
সর্বশেষ ভিডিও বার্তায় মেসি ক্ষমা চাওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। এমনকি এর মধ্য দিয়ে অসম্ভব মনে হতে শুরু হওয়া মেসি-পিএসজির চুক্তি নবায়নের সম্ভাবনাও নাকি নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
বিশ্বকাপের পর নতুন বছরের শুরু থেকে মেসি-পিএসজির চুক্তি নবায়ন নিয়ে নেতিবাচক খবর সামনে আসতে শুরু করে। সে সময় মূলত দুটি জায়গাতেই আটকে ছিল মেসির নতুন চুক্তি, যার একটি ছিল মেসির বেতনের অঙ্ক এবং অন্যটি ছিল চুক্তির মেয়াদ। তবে সৌদিযাত্রা নিয়ে বিতর্কের পর মেসির ক্লাব ছাড়ার সম্ভাবনা আরও বেগবান হয়।
সৌদি সফরের জন্য ক্ষমা চেয়ে যা বললেন মেসি
এত সব কাণ্ডের পর মেসির পিএসজিতে থাকার সম্ভাবনায় অনেকেই দাঁড়ি টেনে দিয়েছেন। মেসির ক্ষমা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য দুই পক্ষের বরফ নাকি অবশেষে গলতে শুরু করেছে। এখন পিএসজি নাকি চাইছে মেসি থেকে যান। এমনকি এ জন্য নাকি আর্থিকভাবে সেরা প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবছে তারা।
এর আগে গত বছরের শেষ দিকে নতুন চুক্তি নিয়ে মেসি নাকি পিএসজি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল। সে সময় মেসি ক্লাবের কাছ থেকে চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। পিএসজির প্রস্তাবের পাশাপাশি বার্সেলোনা, ইন্টার মায়ামি এবং সৌদি ক্লাব আল-হিলালের প্রস্তাবকে যাচাই করতেই মূলত মেসির এই সময় চাওয়া বলে মনে করেন অনেকে।
পিএসজি তাঁর এই চাওয়াকে সম্মান দেখালেও তারা বলেছিল, মেসি অতিরিক্ত সময় নিলে তারা তাঁর আশা ছেড়ে দিয়ে বিকল্প খুঁজে নেবে। তবে মেসি এখন পর্যন্ত পিএসজিকে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। আর বর্তমানে ক্লাবের নিয়ম ভেঙে দুই সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞাতেও আছেন বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টাইন মহাতারকা।
মেসি বিদায় নিলে পিএসজির যত ক্ষতি
সানডে টাইমস বলছে, আজ রাতে ত্রয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে এসব নিয়ে মেসির সঙ্গে আলোচনা করতে চায় না পিএসজি কর্তৃপক্ষ। নিজেদের শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে এই ম্যাচটি পিএসজির জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণও বটে। এদিকে পরের মৌসুমে কোথায় খেলবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে মেসির জন্য বড় বাধা বার্সেলোনার অর্থনৈতিক সংকট। নয়তো মেসি ও তাঁর পরিবারের নাকি কাতালুনিয়ায় ফেরার ইচ্ছা।
শেষ পর্যন্ত আর্থিক সংগতির নীতি মেনে বার্সা মেসিকে নিতে না পারলে তখন আর্জেন্টাইন তারকার সামনে দুটি বিকল্পই হাতে থাকবে—আল-হিলাল ও ইন্টার মায়ামি।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে আল-নাসর নিয়ে যাওয়ার পর মেসির দিকে হাত বাড়ায় সৌদি লিগের ক্লাব আল-হিলাল। এরই মধ্যে দুই বছরের জন্য রেকর্ড ৪০ কোটি ইউরোর প্রস্তাবও নাকি তারা দিয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবে এবং সৌদি লিগে রোনালদোর মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা নাকি মেসির কপালেও চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে। তাই আরব দেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে শেষ পর্যন্ত সরেও আসতে পারেন মেসি।
বার্সা টাকা ছাড়া সবই দেবে, সৌদি শুধু টাকাই দেবে—কোথায় যাবেন মেসি
মেসির হাতে থাকা সর্বশেষ বিকল্প ইন্টার মায়ামি, যেটির মালিকানা আছে ইংলিশ কিংবদন্তি ডেভিড বেকহাম। মেসিকে পেতে মায়ামি নাকি নিজেদের পুরো বাজেট খরচ করতে তৈরি। এমনকি এমএলএসের সব ক্লাব মিলে মেসির বেতন দেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
তবে ইউরোপিয়ান ফুটবলের আকর্ষণ ছেড়ে মেসি মার্কিন মুলুকে যেতে চাইবেন কি না, সে প্রশ্নও রয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে পিএসজি যদি চাহিদামতো প্রস্তাব দিয়ে রাখতে চায়, তাহলে মেসি সাম্প্রতিক তিক্ততা ভুলে চুক্তি নবায়ন করবেন কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।