
প্রথমবারের মতো মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাচ্ছেন একজন ফিলিস্তিনি তরুণী। নাদিন আইউব নামের ওই তরুণী একজন উদ্যোক্তা ও মডেল। আগামী নভেম্বরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ৭৪তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার আসর বসবে। সেখানে ১৩০টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিযোগীদের মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি।
মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন (এমইউও) এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে নাদিন আইউবের অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন গর্বের সঙ্গে সারা বিশ্বের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও নারীর ক্ষমতায়নকে উদ্যাপন করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনের সফল অধিকারকর্মী ও মডেল নাদিন আইউব সহনশীলতা ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। আমরা তাঁকে মিস ইউনিভার্স মঞ্চে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আছি। সেখানে তিনি সগর্বে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে আসা প্রতিযোগীদের পাশে দাঁড়াবেন।’
২৭ বছর বয়সী নাদিন আইউবের জন্ম ফিলিস্তিনের রামাল্লায়। তিনি একজন স্বীকৃত ফিটনেস ও পুষ্টিবিদ। পড়াশোনা করেছেন সাহিত্য ও মনোবিজ্ঞানে। তাঁর বাবা একজন আইনজীবী, মা শিক্ষক। তিনি বেশির ভাগ সময় ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় কাটিয়েছেন। বর্তমানে তিনি রামাল্লা, দুবাই ও আম্মানে থাকেন।
তবে মাতৃভূমির প্রতি টান থেকে বারবার রামাল্লায় ছুটে যান নাদিন। সেখানে তিনি সাইয়্যেদাত ফিলিস্তিন নামের একটি দাতব্য সংস্থার সঙ্গেও কাজ করেন। সংস্থাটি নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের দেশকে উপস্থাপন করা নাদিনের জন্য নতুন কিছু নয়। ২০২২ সালে প্রথম ফিলিস্তিনি হিসেবে মিস আর্থ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। সেবার তিনি শীর্ষ পাঁচে স্থান করে নেন। ওই বছর মিস প্যালেস্টাইন নির্বাচিত হন তিনি।
পরের বছর গাজায় ইসরায়েলি হামলার কারণে মিস প্যালেস্টাইন প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়নি। তবে এ সময়ে থেমে থাকেননি তিনি। বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। গাজায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ধ্বংসের বিষয়টি তুলে ধরা এবং সংঘাতের মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশুদের লড়াইয়ের কথা বিশ্ববাসীর সামনে পৌঁছে দিচ্ছেন।
ইনস্টাগ্রামে নাদিন আইউবের ১০ লাখ ফলোয়ার। গত বৃহস্পতিবার ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথা জানান তিনি। সাদা পোশাক পরা ছবিতে ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী শিল্পরূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। উঠে এসেছে নিজ দেশের ঐতিহ্য, পরিচয় ও ব্যক্তিগত ইতিহাসের গল্প। তিনি লিখেছেন, ‘গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছি, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মিস ইউনিভার্সে ফিলিস্তিন প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে।’
নাদিন আরও লিখেছেন, ‘ফিলিস্তিনিরা, বিশেষ করে গাজাবাসী যখন যন্ত্রণা ভোগ করছে, তখন আমি সেই জনগণের কণ্ঠস্বর বহন করছি। আমি প্রত্যেক ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুর প্রতিনিধিত্ব করছি। বিশ্বকে তাদের শক্তি দেখাতে হবে।’
গাজায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা বেড়ে চলছে। এর মধ্যে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ফিলিস্তিনকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় উপত্যকাটিতে অন্তত ৬২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
সিএনএন