তানজিয়া জামান মিথিলা শুরুতে ছিলেন র্যাম্প মডেল। ২০১৯ সালে ভারতীয় পরিচালক হায়দার খানের ‘রোহিঙ্গা’ সিনেমা দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক। একই বছরে ‘ফেস অব বাংলাদেশ’ এবং ‘ফেস অব এশিয়া’-এ মুকুট জেতেন। পরে ২০২০ সালে নির্বাচিত হন ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’। মিথিলা বলেন, ‘২০২০ সালে মিস ইউনিভার্সের জন্য প্রস্তুতি ও জয়টা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ওই সময় অনেকে গালি দিয়েছেন। কেউ ভাবত, আমি কিছু করতে পারব না। মন খারাপ হয়েছিল, তবে কাউকে সেই কষ্ট বুঝতে দিইনি। সব সময় জানতাম, ভালো কিছু করতে করব।’ যদিও সেবার সময়স্বল্পতা ও কোভিড মহামারির কারণে মূল আসরে যাওয়া হয়নি।

নতুন মানুষ
অপেক্ষা ও প্রস্তুতির পর ২০২৫ সালে আবার ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ মুকুট জেতেন মিথিলা। মর্যাদাপূর্ণ সুন্দরী প্রতিযোগিতাটির মূল আসরে অংশ নিতে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে উড়াল দেন ২ নভেম্বর। ঢাকা ছাড়ার সময় কাছের বন্ধু ও পরিবার তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন এবং মনোবল শক্ত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করেই ব্যাংকক যান মিথিলা। এবার প্রতিযোগিতার শুরুতেই এত সাড়া পাবেন ভাবেননি। বললেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এভাবে সাপোর্ট করবে—এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। মনে হচ্ছে আমরা ভালো কিছু করব।’ পিপলস চয়েসে ভোটিংয়ে ৫ নম্বরে জায়গা করার পর থেকে বিনোদন অঙ্গনের সহকর্মী, বন্ধু ও আত্মীয়রা সমর্থন জানিয়েছেন। পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর মা, যিনি প্রতিটি কঠিন সময়ে পাশে থেকেছেন। এর বাইরে ভাইবোন, চাচা-চাচি, কাজিনরা সবাই সব সময় সাহস জুগিয়েছেন। সবার সমর্থন তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে, বাড়িয়ে দিয়েছে আত্মবিশ্বাস।

মিস ইউনিভার্স ক্যাম্পে দুই সপ্তাহ কাটিয়েছেন মিথিলা। এই দুই সপ্তাহে শিখেছেন সময় ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা এবং নিজেকে নতুনভাবে তুলে ধরার কৌশল। বললেন, ‘এখানে অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে। সিস্টারহুড তৈরি করে কীভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হয়, শিখেছি। সবচেয়ে বড় বিষয়, মিস ইউনিভার্স আমাকে একটা নতুন মানুষ হিসেবে তৈরি করেছে। আমার যোগাযোগের দক্ষতা বাড়িয়েছে।’
চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগে নিজেকে এখন একদম শান্ত ও স্থির রাখছেন মিথিলা। প্রতিদিন নিজেকে মনে করাচ্ছেন—যা হওয়ার হবে, সেরাটা দেওয়াটাই তাঁর দায়িত্ব।

ফলাফলের জন্য অপেক্ষা
পিপলস চয়েসে ধারাবাহিক সাফল্য তাঁকে দিয়েছে আত্মবিশ্বাস। ভোটিংয়ে ওঠানামার মধ্যে মিথিলা বলেন, ‘এক নম্বরে ছিলাম, এখন দুই নম্বরে বাংলাদেশ। ভাবা যায়! আমরা দেখিয়ে দিছি, বাঙালিরা চাইলে কতটা এগোতে পারে। কাল (বুধবার) শেষ দিন—আশা করি, আবার বাংলাদেশ এক নম্বরে যাবে। মানুষের ভালোবাসা থাকলে অসম্ভব কিছু নেই।’ পিপলস চয়েসে আজকেই শেষ হচ্ছে ভোট। বাংলাদেশের মানুষ চাইলেই তাঁকে পিপলস চয়েসে বিজয়ী করতে পারেন। মিস ইউনিভার্স অ্যাপে গিয়ে বাংলাদেশ সিলেক্ট করে ‘গেট ভোট’ নির্বাচন করতে হবে। এরপর ‘পিপলস চয়েস’ সেকশনে তানজিয়া জামান মিথিলা নির্বাচন করে প্রতিটি বিজ্ঞাপন দেখার মাধ্যমে আরও ভোট দেওয়া সম্ভব। পিপলস চয়েসে ১ নম্বরে থাকলে সরাসরি সেরা ৩০-এ পৌঁছে যাবেন মিথিলা।
২১ নভেম্বর ঘোষণা হবে চূড়ান্ত ফলাফল। মিথিলা জানালেন, ‘এটা একটা প্রতিযোগিতা। ফলাফল তো একটা আসবেই। ফলাফল যা–ই হোক, আমি খুবই খুশি। কারণ, দেশের মানুষ আমাকে ভালোবাসছে—এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। এই পাওয়া নিয়েই আগামী পথচলা শুরু করব।’

যদি জয়ী হন, তাহলে প্রথম পরিকল্পনা কী থাকবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে মিথিলার বলেন, ‘সবার আগে ক্ষুধামুক্তির জন্য কাজ করব। ২০১৬ সাল থেকে কাজ করছি। তহবিলও সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন সংকটে মানুষকে ও বন্যার্তদের সহযোগিতা করেছি। পথশিশুদেরও জন্য কাজ করেছি। আমার নিজের এলাকায়ও কাজ করেছি। মানুষ হিসেবে এসব করেছি। আর মিস ইউনিভার্স হলে আমার দেশ থেকে কাজ শুরু করব। আমি বিশ্বাস করি, চ্যারিটি স্টার্টস ফ্রম দ্য হোম।’
মনজুর কাদের
ঢাকা

















