মার্কিন প্রতিনিধিরা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেননি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তারা কোনো দলকে উৎসাহিত করছেন না বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। প্রতিনিধি দলে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু-সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এগুলো নিয়ে কোনো প্রসঙ্গ আসেনি, কোনো আলোচনাই হয়নি। তারা এতটুকু বলেছেন, তারা কোনো পার্টিকে এনকারেজ (উৎসাহিত) করার জন্য এখানে আসেননি। তারা কোনো দলকে সাপোর্ট করেন না।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশে যেন একটি অবাধ সুষ্ঠু, সহিংসতা মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়- এর বাইরে তারা কিছুই চান না, কিছুই বলেননি। তারা বারবার বলে গেছেন- কোনো দল বা ব্যক্তিকে তারা সমর্থন করার জন্য এখানে আসেননি। তারা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আসেনি বলেও আমাদের জানিয়েছেন। তারা কারও প্রতি বিরাগভাজন হয়ে এখানে আসেননি। তারা চাচ্ছেন বাংলাদেশের যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, সেটিই যেন চলতে থাকে। তারা যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, সেটা সবার জন্য সেটা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করে দেননি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। সেটি তারা আমাদের জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছেন, এসব কিছু নিয়ে তারা সন্তুষ্ট, সেটা তারা আমাদের কাছে বলে গেছেন। আমাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় তারা খুশি।
তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সমস্যার কত দ্রুত সমাধান হবে সেটা নিয়ে আলাপ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানব পাচারকারীরা যে খেলাধুলা করছেন, সেটা যেন না করতে পারে, তা নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমরা বলেছি- মানবপাচার রোধে আমরা টায়ার থ্রি থেকে টায়ার-টুতে চলে এসেছি। এটা তাদেরই মূল্যায়ন, সেটাকেও তারা অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন। অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা সবকিছু নিয়েই সন্তুষ্ট।
‘তারা বলেছেন, আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং ভায়োলেন্স ফ্রি হয়, সেটা তারা দেখতে চান। আমরা বলেছি সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবেই তারা কাজ করবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৈরি আছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলার বিশেষ কিছু বাহিনীকে তারা যে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করেছে, সেটাও আমি তাদের মনে করিয়ে দিয়েছি।
র্যাব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ এবং সহিংসতামুক্ত একটি নির্বাচন তারা চেয়েছেন। আমরা বলেছি- আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৈরি আছে, তোমাদের ট্রেনিং নিয়ে তারা উজ্জীবিত আছে। আশা করি তারা একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেবে। এরই মধ্যে অনেকগুলো নির্বাচন হয়ে গেছে, সেগুলো অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ হয়েছে, সেরকম জাতীয় নির্বাচনটাও শান্তিপূর্ণ হবে, আমরা সেটিই আশা করছি।
তারা বাংলাদেশের পরিবেশ নিয়ে খুশি, কিন্তু তারা তাদের নাগরিকদের চলাফেরায় সতর্কতা জারি করছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কামাল বলেন, আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেনি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা বলেছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের জন্য আমরা সবসময় তোমাদের পাশে আছি।