সুস্থ সংস্কৃতি জাতির রুচি তৈরি করে। সবচেয়ে সুন্দর কাজ, নিজের কাজটুকু দায়িত্বের সঙ্গে করা। আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে হলে সে অভ্যাসই করতে হবে শিক্ষার্থীদের। ‘যোসেফাইট পঞ্চম সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের বক্তব্যে উঠে এল এসব মন্তব্য।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উদ্বোধন করা হয় তিন দিনের এই সাংস্কৃতিক উৎসব। যোসেফাইট কালচারাল ফোরাম আয়োজিত এই উৎসবে অংশ নিচ্ছেন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হকের বক্তব্যে উঠে আসে ইতিহাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় তরুণদের ভূমিকার কথা। লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন তিনি। তাঁর কথায় উঠে আসে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা প্রকৌশলী এফ আর খানের যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর বিখ্যাত সিয়ার্স টাওয়ার নির্মাণের কথা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তরুণ মুক্তিযোদ্ধা আজাদ ও তাঁর মায়ের আত্মত্যাগের ঘটনার গল্প শোনান শিক্ষার্থীদের। দার্শনিক সক্রেটিস ও লেখক লিও তলস্তয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘মানুষের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান তাঁর বর্তমান সময়। প্রত্যেকে নিজের দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করলেই এগিয়ে যাবে দেশ। তাই এ অভ্যাস শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
সাংস্কৃতিক চর্চা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই উদাহরণ তুলে ধরতে তিনি জানান বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের বেহালা বাজানো, বিল গেটসের পাঠাভ্যাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগীতচর্চা ও ফুটবল খেলায় দক্ষতার উদাহরণ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অভিনেতা এবং সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জিতু আহসানের বক্তব্যে উঠে আসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিভিন্ন ক্লাব প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব। জিতু আহসান বলেন, ‘৩০ বছর আগে যোসেফাইট কালচারাল সেন্টার শুরুর সময় আন্তর্জাল ছিল না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল না এখনকার মতো। তবু শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উৎসাহী ছিলেন এই সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ক্লাব প্রতিষ্ঠায়। এরই ফল আজকের এই যোসেফাইট পঞ্চম সাংস্কৃতিক উৎসবের বড় পরিসরে আয়োজন।’
স্বাগত বক্তব্য দেন উপাধ্যক্ষ ব্রাদার রসি জাস্টিন কস্তা সিএসসি। আয়োজন-সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরেন ক্লাবের চিফ মডারেটর নরেশ চন্দ্র পাল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ব্রাদার লিও জেমস পেরেরা সিএসসি বলেন, শিক্ষকদের বড় দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখতে শেখানো। শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ তৈরির জন্য প্রয়োজন সাংস্কৃতিক চর্চা করা।
জাতীয় সংগীত পরিবেশন, প্রদীপ প্রজ্বালন এবং বেলুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় উৎসবের। ‘মুক্ত করো ভয়, আপন মাঝে শক্তি ধরো নিজেকে করো জয়’—স্লোগান নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে। আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য, চিত্রাঙ্কণ, বই কুইজসহ মোট ১৪টি বিষয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান, আবৃত্তি ও শাস্ত্রীয় সংগীতের ফিউশন উপস্থাপন করেছেন যোসেফাইট কালচারাল ফোরামের সদস্যরা। এই উৎসবের সহযোগিতায় আছে বিএসআরএম, ইউনিলিভার, কিশোর আলো,সময় টেলিভিশনসহ মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান। কাল শনিবার বিকেল ৪টায় পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিন দিনের এই সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা উৎসব।