মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে ফলকার টুর্ককে চিঠি প্রধান উপদেষ্টার

0
50
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক, ফাইল ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশে গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সময়কালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ-সংক্রান্ত অনুরোধ জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ককে চিঠি দিয়েছেন।

আজ শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি প্রচারিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানানো হয়।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তথ্যানুসন্ধানের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। বিক্ষোভের সময় ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপপ্রয়োগের বিষয়ে প্রতিবেদনের পাশাপাশি এসব লঙ্ঘনের মূল কারণ বিশ্লেষণ, ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য সুপারিশের লক্ষ্যে হাইকমিশনারের দপ্তর আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি তথ্যানুসন্ধানী দল নিযুক্ত করবে। তথ্যানুসন্ধানী দলটি কাজের ক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছে।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, জাতিসংঘের একটি অগ্রবর্তী দল গত সপ্তাহে (২২-২৯ আগস্ট) বাংলাদেশ সফর করে। প্রতিনিধি দলটি সফরকালে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের ছাত্রনেতারা, যাঁদের অনেকে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আটক বা আহত হয়েছেন, তাঁদের পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক দল, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে বিভিন্ন বৈঠকে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বলপ্রয়োগের তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছে। তারা নাগরিক পরিসর, সত্য ও ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা, অভিঘাতের প্রশমন, ক্ষতিপূরণ, বিরোধ নিষ্পত্তির পাশাপাশি সংস্কারের প্রক্রিয়ায় মানবাধিকারের অন্যান্য পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগসহ বিস্তৃত ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর টেকসই উপায়ে কীভাবে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেছে।

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। একই সঙ্গে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজে পাঁচ সদস্যের একটি জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণাকে স্বাগত জানান তিনি।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে বলপূর্বক গুমের বিষয়টির একটি দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক ইতিহাস রয়েছে। যা সুরাহার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ও জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রক্রিয়া জোরালোভাবে আহ্বান জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশের গঠিত জাতীয় তদন্ত কমিশনের কাজে সহায়তার জন্য তারা প্রস্তুত। এই কাজ ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরামর্শে হওয়া উচিত। এই প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়া উচিত, যার মধ্যে গুম হওয়া লোকজনের সন্ধানের নির্দেশনা যুক্ত রয়েছে।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করতে, জবাবদিহি, পুনর্মিলন ও বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য মানবাধিকার সমুন্নত রাখার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার ও জনগণকে সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তর উন্মুখ হয়ে আছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.