মাতারবাড়ীতে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল

0
164
এলএনজি টার্মিনাল

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে হচ্ছে দেশের প্রথম স্থলভিত্তিক এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ল্যান্ডবেজড এলএনজি টার্মিনাল নামে এই টার্মিনালটির গ্যাস রূপান্তরের সক্ষমতা হবে দিনে ১০০ কোটি ঘনফুট। এটি স্থাপনে কাজ দিতে ইতোমধ্যে ৮টি কোম্পানির সংক্ষিপ্ত তালিকা করার পাশাপাশি জমিও নির্ধারণ হয়েছে। এখন চলছে ভূমি স্থানান্তরের প্রক্রিয়া।

জ্বালানি ঘাটতি মেটাতে সরকার আমদানি করা গ্যাসের ওপরই নির্ভর করছে। বর্তমানে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। দেশীয় ও আমদানি মিলে সরবরাহ গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় মজুত থেকে দৈনিক ২২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ২০৩০ সালে গ্যাসের মোট চাহিদা বেড়ে ৫৬০ কোটি ঘনফুট হতে পারে। ফলে নতুন বড় ধরনের মজুত আবিষ্কৃত না হলে তখন দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ কমে ১০০ কোটি ঘনফুটের নিচে নামতে পারে। তখন বাড়তি চাহিদা পূরণে এলএনজির আমদানি বাড়াতেই হবে। এ চিন্তা থেকেই সরকার আরও এলএনজি টার্মিনাল করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে।

আমদানি করা এলএনজি জাহাজে করে আনা হয়। এর পর তা গ্যাসে রূপান্তর করে সরবরাহ করতে হয় পাইপলাইনে। এর জন্য দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে মহেশখালীতে। যার একটি পরিচালনা করেছে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি ও আরেকটি দেশীয় সামিট গ্রুপ। এ দুই টার্মিনাল দিয়ে দিনে সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতা ১০০ কোটি ঘনফুট। যদিও গড়ে দৈনিক সরবরাহ করা হয় ৮০ কোটি ঘনফুট। এখন মহেশখালীতেই দিনে ৬০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ সক্ষমতার তৃতীয় ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের কাজ পেয়েছে সামিট গ্রুপ। চতুর্থ ভাসমান টার্মিনাল হবে পটুয়াখালীর পায়রায়। কাজ পেতে পারে এক্সিলারেট এনার্জি।

স্থলভাগে টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৫-১৬ সালের দিকে। পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর জন্য ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বানের পর ৮টি কোম্পানির সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছিল। কিন্তু দেশীয় একটি প্রভাবশালী কোম্পানি তালিকা থেকে বাদ পড়া নিয়ে এরপরই কার্যক্রম থমকে যায়। বর্তমানে সরকারের ওপর মহলের উদ্যোগে আবার প্রকল্পটিতে গতি এসেছে বলে জানা গেছে। চার বছর পর গত বছরের এপ্রিলে প্রি-বিড মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব দাখিলের সর্বশেষ তারিখ চলতি বছরের ৮ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া টার্মিনাল স্থাপনে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (সিপিজিসিবিএল) প্রস্তাবিত দুটি স্থান থেকে উপযুক্ত স্থান নির্ধারণের জন্য ৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সাইট পরিদর্শন করে গত ৯ জানুয়ারিতে জ্বালানি সচিবের কাছে তাদের প্রস্তাব জমা দেয়। গত ২১ মে জ্বালানি বিভাগে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিপিজিসিবিএলে অস্থায়ী অ্যাশপন্ডের জমি আরপিজিসিএলকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়।

আরপিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি) প্রকৌশলী শাহ আলম বলেন, ভূমি হস্তান্তরের কাজ চলছে। এরপর আগ্রহী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব নেওয়া হবে। স্থলভিত্তিক এ টার্মিনালের গ্যাস রূপান্তরের ক্ষমতা প্রথমে ১০০ কোটি ঘনফুট করা হবে। পরে যুক্ত হবে আরও ১০০ কোটি ঘনফুট সক্ষমতা।

২০১৮ সাল থেকে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। কাতার ও ওমানের সঙ্গে ১৫ ও ১০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি দুটি চুক্তি আছে পেট্রোবাংলার। বছরে ৫৬টি এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে তারা। চুক্তি অনুসারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে আনুপাতিক হারে এ দাম নির্ধারিত হয়। গত ১ জুন কাতারের সঙ্গে সই হয় ১৫ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় চুক্তি। যার আওতায় বাড়তি এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকে। পাশাপাশি চুক্তিবদ্ধ ২১টি কোম্পানির মাধ্যমে চাহিদা অনুসারে স্পট মার্কেট থেকে নিয়মিত এলএনজি কেনে সরকার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.