৪০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে টানা ৪দিন যন্ত্রণা সহ্য করে চলে গেল জারিফও। তাকে নিয়ে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৪ জনে। শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জারিফ।
জারিফের বাসা উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে। দুই ভাইবোনের মধ্যে সে ছিল ছোট। পড়ত সপ্তম শ্রেণিতে। প্রতিদিনের মতো সেদিনও বইখাতা গুছিয়েই স্কুলে গিয়েছিল জারিফ। কিন্তু তার প্রিয় সেই স্কুলে আর আর ফেরা হলো না তার।
জারিফের মৃত্যুর আগে তার বাবা হাবিবুর রহমান ছেলের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে আইসিইউর সামনে আসেন। তিনি বলেন, ‘দুই সন্তানের মধ্যে জারিফ ছোট। সে আমার একমাত্র ছেলে। বড়টা মেয়ে। ওরাই আমার সম্পদ, আমার সবকিছু। আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই। আব্বু (জারিফ) যেন আমার বুকে ফিরে আসে।’
জারিফের মামা আবু মো. শাহরিয়ার জানান, দুই ভাইবোনের মধ্যে জারিফ ছোট। প্রতিদিন সকালে তার মা রাশেদা ইয়াসমিন তাকে স্কুলে রেখে আসেন। ঘটনার দিনও স্কুলে রেখে বাসায় চলে আসেন তিনি। জারিফের একাই বাসায় ফেরার কথা ছিল। স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে স্বজনরা দ্রুত ছুটে যান ঘটনাস্থলে। কিন্তু সেখানে পাননি। দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তার বাবা হাবিবুর রহমানকে ফোন করে জানান, জারিফকে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। অবস্থা গুরুতর। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। এরপরই বাবাসহ আত্মীয়রা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল। মঙ্গলবার সকালে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। অবস্থা অবনতি হলে বিকেলে নেওয়া হয় আইসিইউতে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে লাইফ সাপোর্টে থেকে আজ (শনিবার) সকালে চির বিদায় নেয় জারিফ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, জারিফের শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। শিশুটির মরদেহ ইতোমধ্যে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। তারা বাবা হাবিবুর রহমান ব্যবসায়ী। দুই ভাই বোনের মধ্যে জারিফ ছিল ছোট।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক নাসির উদ্দীন জানিয়েছেন, রোগীদের আলাদা আলাদা ক্যাটাগরিতে ভাগ করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুর ও চীনের চিকিৎসক দল কাজ করছেন। ১৫ জনের অবস্থা উন্নতির দিকে। তাদের পর্যায়ক্রমে আগামীকাল বা পরশু হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে।
এদিকে, হাসপাতাল চত্বরে জোরদার রয়েছে নিরাপত্তা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিমান বাহিনী রাখছে কড়া নজরদারি। বার্ন ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে কোনো ব্লাড বা স্কিন ডোনারের প্রয়োজন নেই। আহতদের চিকিৎসার সব খরচ বহন করবে সরকার।