মা খুন, বাবা জেলে, কী হবে ৬ শিশুর

0
201
আকলিমা-সুজন দম্পতির সাত সন্তান

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের গাজীপুর ইউনিয়নে সোনাচং গ্রামে গত শনিবার গৃহবধূ আকলিমা খাতুনকে দা দিয়ে কুপিয়ে হাত-পা বিচ্ছিন্ন করে খুন করে তাঁর সাবেক স্বামী সুজন মিয়া। পুলিশ এরই মধ্যে সুজনকে গ্রেপ্তার করে রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। তবে বাবার এই অপরাধের শাস্তি যেন এখন ভোগ করছে আকলিমা-সুজন দম্পতির সাত সন্তান। এর মধ্যে সবচেয়ে ছোট ৯ মাস বয়সী হাবিবুর রহমানের কান্না কোনোভাবেই থামাতে পারছে না কেউ। অবুধ এই শিশুটি মায়ের দুধের জন্য কেঁদেই চলেছে।

তার অন্য ভাইবোনও মাকে হারিয়ে আর বাবার কর্মকাণ্ডে যেন হতভম্ব। মা খুন হওয়ার পর থেকে মামা ফিরোজ মিয়ার জিম্মায় আছে তারা। কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতা কোনোভাবেই তাদের স্বাভাবিক থাকতে দিচ্ছে না। নাওয়া-খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে ছয় শিশু।

পুলিশ সূত্র জানায়, খুনি সুজনকে রোববার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। সে বর্তমানে হবিগঞ্জ কারাগারে। এর আগে সন্ধ্যায় সুজন হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিমের কাছে আকলিমাকে খুন করার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। চুনারুঘাট থানার ওসি রাশেদুল হক  জানান, নিহত আকলিমা সাত ছেলেমেয়ে ও স্বামীকে রেখে আরও দুটি বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ  সুজনের। সেই ক্ষোভ থেকেই আকলিমার হাত-পা কেটে খুন করেছে বলে স্বীকার করে সুজন।

এদিকে গতকাল চুনারুঘাট উপজেলার ছনখলা গ্রামে আকলিমার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাঁর সাত সন্তানকে। এর মধ্যে বড় মেয়ে তাহমিনা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। তাহমিনা বর্তমানে স্বামীর বাড়ি থাকলেও ছোট ছোট ছয় ভাইবোনকে ভরণপোষণ করার সামর্থ্য তাঁর নেই।

তাহমিনা জানান, মা ছাড়া তাঁদের দেখার মতো কেউ ছিল না। ছোট ছোট ছয় ভাইবোনের এখন কী হবে তাহমিনা জানেন না। মা খুন হওয়ার পর তারা নানাবাড়ি ছনখলা চলে যায়। এরপর থেকে আমার ছয় ভাইবোন তানজিনা আক্তার (১৩), মমনিনা আক্তার (১০), সাবিনা আক্তার (৮), সাহেদা আক্তার (৫), আতাউর রহমান (৩) ও সবচেয়ে ছোট ৯ মাস বয়সী হাবিব নানাবাড়ির লোকজনের হেফাজতে আছে।

তাহমিনার বোন কিশোরী তানজিনা কাঁদতে কাঁদতে জানায়, তার বাবা মাদকাসক্ত। প্রায়ই নেশা করে বাড়ি ফিরে মাকে মারধর করত। বাবা তাদের ভরণপোষণের টাকা দিত না। তাই মা ছিল একমাত্র ভরসা। এখন মা নেই, ফলে তারা কীভাবে কার কাছে থাকবে জানে না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ১৫ বছর আগে সোনাচং গ্রামের ফজল মিয়ার ছেলে সুজনের সঙ্গে ছনখলা গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের মেয়ে আকলিমার বিয়ে হয়। একে একে তাদের সাতটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। বনিবনা না হওয়ায় সম্প্রতি আকলিমা ও সুজনের তালাক হয়ে যায়। এরপর সন্তানদের নিয়ে খেতামারা আশ্রয়ণে থাকতেন আকলিমা। গত শনিবার সন্ধ্যায় সোনাচং খেলারমাঠ-সংলগ্ন রাস্তায় সাবেক স্বামীর সঙ্গে দেখা হলে সন্তান ও সংসারে ফেরা নিয়ে আকলিমার বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। সেই সময় সুজন দা দিয়ে কুপিয়ে আকলিমার দুই হাত ও এক পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আকলিমা মারা যান। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই আকলিমার ভাই ফিরোজ মিয়া মামলা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার সন্ধ্যায় আকলিমার লাশ তাঁর বাবার বাড়ি পৌঁছালে সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ঘটনার ভয়াবহতার কথা স্মরণ করে কিশোরী তানজিনা বলে, ‘আম্মা আমাদের নিয়ে আশ্রয়ণে থাকতেন। তিনি বাড়ি বাড়ি শুঁটকি বিক্রি করে সংসার চলাতেন। শনিবার সন্ধ্যায় সোনাচং খেলারমাঠ এলাকার রাস্তায় মায়ের চিৎকার শুনে আমি ছুটে আসি। এসে দেখি মায়ের হাত ও পা কাটা এবং  জামাকাপড় রক্তমাখা। অনেক ডাকাডাকি করেছি; কিন্তু মা কথা বলেনি। তখনই বুঝেছি আমাদের মা আর নেই।

আপাতত বোনের সাত সন্তানকে দেখে রাখছেন আকলিমার ভাই ফিরোজ। তিনি বলেন, এদের বাবা ফেলে দিতে পারলেও আমি কাউকে ফেলতে পারব না। ভাগনে-ভাগনিরা আমার সঙ্গেই থাকবে। তবে এই ছয় শিশুর পড়াশোনা ও ভবিষ্যতের জন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.