‘টেলি একাডেমি মরণোত্তর স্মৃতি পুরস্কার আজকে পেয়েছে আমার ঐন্দ্রিলা। আমরা মা-বাবা নিলাম। অসাধারণ আতিথেয়তা পেলাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। তিনি ঐন্দ্রিলাকে খুব ভালোবাসতেন, সে কথা জানালেন। অনেক কথা হলো ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে। আমরা আপ্লুত। আমার মানিকের স্মৃতি আঁকড়ে এভাবেই বেঁচে থাকব।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টেলি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস আয়োজন এবং মেয়েকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেন কলকাতার প্রয়াত অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলার মা শিখা শর্মা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল ‘টেলি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস’-এর । সেখানে মরণোত্তর কৃতী সম্মান দেওয়া হয় অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মাকে। মঞ্চে উঠে পুরস্কার নিলেন শোকাতুর মা-বাবা। মায়ের বুকে আঁকড়ে ধরা মেয়ের ছবি, বাবার হাতে পদক। মঞ্চেই হু হু করে কেঁদে ওঠেন ঐন্দ্রিলার মা। একই মঞ্চে এদিন পুরস্কৃত হয়েছেন সব্যসাচী চৌধুরীও।
হাজির ছিলেন স্বয়ং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই অনুষ্ঠানের পথচলা। এবার মোট ৪১টি ক্যাটাগরিতে ৬৬ জনকে সম্মান জানানো হলো টেলি একাডেমির পক্ষে।
কলকাতায় টেলিভিশনের সবচেয়ে চর্চিত দুই মেগা সিরিয়াল ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ ও ‘জগদ্ধাত্রী’। স্টার জলসা ও জি বাংলার এই দুই সিরিয়ালের হাতেই উঠল সেরার সম্মান। সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিয়ালের পুরস্কার পেয়েছে এসভিএফ এবং ব্লুজ প্রোডাকশনের এই দুই মেগা। পাশাপাশি অনুষ্ঠানের বড় পুরস্কার ছিনিয়ে নিলেন এই দুই সিরিয়ালের কলাকুশলীরা। সেরা জুটির পুরস্কার যৌথভাবে জয় করে নিয়েছেন ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র সূর্য-দীপা এবং ‘বাংলা মিডিয়াম’-এর বিক্রম-ইন্দিরা। সেরা অভিনেত্রী ‘জগদ্ধাত্রী’ অঙ্কিতা, সেরা অভিনেতা ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র সূর্য মানে দিব্যজ্যোতি দত্ত। তবে অনুষ্ঠানে সবচেয়ে আবেগঘন মূহূর্ত ছিল ঐন্দ্রিলার পক্ষে তাঁর মা-বাবার পুরস্কার গ্রহণ।
২০২২ সালের ২০ নভেম্বর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন ঐন্দ্রিলা। অফুরান জীবনীশক্তিতে লড়াই করছিলেন অভিনেত্রী। দুবার ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধে জিতেছিলেন তিনি। তবে এবার মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে পরাজিত নভেম্বরের ২০ তারিখে। ২০১৭ সালে ঝুমুর ধারাবাহিকের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা।
এরপর ‘জীবন জ্যোতি’ এবং ‘জিয়ন কাঠি’র মতো ধারাবাহিকে দেখা গেছে তাঁকে। এ ছাড়া ‘ভাগাড়’ ওয়েব সিরিজে কাজ করেছেন তিনি। ২০২২ সালের ১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই দিন থেকে অবিশ্বাস্য এক লড়াই করছিলেন তিনি। মৃত্যুর সঙ্গে যুঝছিলেন প্রতিমুহূর্তে। শুরুর দিকে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন ঐন্দ্রিলা। নানা সাপোর্ট দিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু গত পাঁচ থেকে ছয় দিনে অভিনেত্রীর অবস্থার অবনতি ঘটতে শুরু করে।
১৬ নভেম্বর সকালে তাঁর প্রথম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। হার্টরেট কমে ৪০-এর নিচে নেমে ব্ল্যাঙ্ক হয়ে গিয়েছিল। তবে কয়েক মিনিটের মধ্যে বিভিন্ন সাপোর্টে ফের হার্টবিট ফিরে এসেছিল। কোনোক্রমে তাঁকে রিভাইভ করা সম্ভব হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু এরপর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে শুরু করেছিল।