সাড়ে ৬ লাখ মানুষ নিয়ে দোহার রাত নেমে আসে ৯টার মধ্যেই। কিন্তু এদিন তাকে জেগে থাকতে হয়েছিল ভোর পর্যন্ত! জাগিয়ে রেখেছিল তাকে মরক্কো। পর্তুগালকে হারিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে সেমিফাইনালের ইতিহাস গড়ল বৃহত্তর আরব অঞ্চলের দেশ। তাই লালের ওপর সবুজ তারার পতাকাটি নিয়ে গর্বিত যেন কাতারও। তাই সেমিতে ওঠার রাতে দোহার প্রায় প্রতিটি রাস্তায় ছিল গাড়ির মিছিল; হর্ন বাজিয়ে, গান চালিয়ে, স্লোগান দিয়ে মুখর করে রেখেছিল মরক্কানরা। দল সেমিতে ওঠায় এখন কাসাব্লাঙ্কা টু দোহা মরক্কানদের কাছে যেন ডেইলি প্যাসেঞ্জারি হয়ে গেছে! কোয়ার্টার ফাইনাল দেখে গিয়ে অনেকেই আবার সেমিতে ফিরে আসবেন।
ব্রাজিল ও ইংল্যান্ডের বিদায়ে কাতার বিশ্বকাপে দর্শক উন্মাদনার যে ভাটা পড়েছিল কয়েক দিন, মরক্কানদের ঐতিহাসিক ম্যাচের পর তাতে ফের জোয়ার বইছে। তাদের চোখ এখন আরও সুদূরে, বিশ্বকাপ ট্রফির দিকে। ‘আমাদের এই দলটিকে বিশ্বকাপের সবাই ভালোবেসে ফেলেছে। কারণ আমরা বিশ্বকে দেখাতে পেরেছি- অর্থ না থাকলেও সফল হওয়া যায়, প্রতিভা কম থাকলেও জয় আনা যায়। মরক্কো এখন সবার সামনে উদাহরণ।’ রোনালদোদের বিদায় করার পর কোচ রেগরেগুইয়ের কথায় ঠিকরে উঠছিল আত্মবিশ্বাস। শুরুতে মরক্কোর এই উত্থানকে অনেকেই ‘ফ্লুক’ বলেছিল। কিন্তু উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির রক্ষণ সবাইকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে। গত পাঁচ ম্যাচে মরক্কোর জালে প্রতিপক্ষ কোনো গোল ঢুকাতে পারেনি, বরং একটি গোল তাদের আত্মঘাতী হয়েছে।
যেখানে ইউরোপের দলগুলোর কাছে লাতিনরা হিমশিম খেয়েছে। ব্রাজিলের মতো ফর্মে থাকা দল ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরেছে। সেখানে ইউরোপের সেরা দলগুলোকেই কিনা এক ঘাটের পানি খাইয়েছে এই মরক্কো। বেলজিয়াম, স্পেনের পর পর্তুগাল- সবাইকে বিদায় করেছে এই দলটি। তাই বুক ফুলিয়ে তাদের কোচ বলতেই পারেন- ‘আর তো মাত্র দুটি ম্যাচ। সেরা চারে এসে মরক্কো স্বপ্ন দেখতেই পারে বিশ্বকাপ জেতার। আমরা যা করেছি, এখন পর্যন্ত তা কিন্তু মিরাকেল নয়। অনেকেই বলছে, বিশেষ করে ইউরোপিয়ানরা বলছে, অঘটন ঘটিয়েছে মরক্কো। কিন্তু একটি দল যখন টানা বেলজিয়াম, স্পেন আর পর্তুগালের মতো দলকে হারাতে পারে, তারা নিশ্চয় খারাপ দল নয়। আমরা আমাদের সমর্থকদের খুশি করতে পেরেছি।’ মরক্কোকে এই বিশ্বকাপের রকি সিরিজের ‘রকি’ হিসেবেই দেখছেন তাদের কোচ। যে সিনেমায় এক বক্সার তার সমস্ত কিছু দিয়ে রিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। প্রায় অসম্ভবকে জয় করে নেয়। মরক্কোও এবার সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করার পথ বেছে নিয়েছে। বুধবার সামনে তাদের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। যে ম্যাচে ভয় না পেয়ে বরং মরক্কান তারকা আশরাফ হাকিমি টুইট করেছেন এমবাপ্পেকে। লিখেছেন, ‘দেখা হবে বন্ধু…’।


















