মন্ত্রণালয়ে অভিযোগের পেছনে তাকসিমের ইন্ধন দেখছেন ওয়াসা চেয়ারম্যান

0
218

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ

ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গত ৩০ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। এই বিষয়ে চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানতে চেয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

ওই চিঠিতে কোনো কর্মকর্তার নাম উল্লেখ ছিল না। চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান পদটি নির্বাহী পদ না হওয়া সত্ত্বেও চেয়ারম্যান বিভাগীয় প্রধানদের ডেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। নথি অনুমোদন ছাড়াই চেয়ারম্যান তাঁর নির্দেশ পালন করতে বাধ্য করেন। চেয়ারম্যান পদটি সম্মানিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি বেতনভুক্ত কর্মকর্তাদের মতো প্রতিদিন অফিস করেন।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওয়াসার বরখাস্ত করা কর্মকর্তাদের উসকে দেওয়ার অভিযোগ করা হয় চিঠিতে। তাতে বলা হয়, ওয়াসার কর্মচারীরা সিবিএ নেতা দাবি করে ঠিকমতো ডিউটি করেন না। কর্মচারীদের ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে বললে তাঁরা চেয়ারম্যানের ভয় দেখান। অফিসে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। চেয়ারম্যান কিছু ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ারও নির্দেশ দেন।

ওয়াসার কর্মকর্তাদের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পানি সরবরাহ শাখা থেকে ওয়াসা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ১৫ নভেম্বর পাঠানো চিঠিতে ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তাদের অভিযোগের বিষয়ে মতামত দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তবে কত দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে, তা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি। একই চিঠি ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানকেও পাঠানো হয়েছে।

চেয়ারম্যান যা বলছেন

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাননি বলে জানিয়েছেন ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘ওয়াসার এমডি যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় সভা করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। কয়েক দিন ধরে শুনতে পাচ্ছি আমাকে সরিয়ে দেওয়ার তৎপরতা চলছে। এই অভিযোগের চিঠি সেই চেষ্টারই অংশ।’

গত মাসে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের নিয়মিত সভা করতে অসহযোগিতা করছিল ওয়াসা প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনা তৈরি হয়। ঢাকা ওয়াসা প্রশাসনের অসহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করতে বিশেষ জরুরি সভাও আহ্বান করেছিল ওয়াসা বোর্ড, কিন্তু তা হয়নি। পরে ভার্চ্যুয়াল নিয়মিত সভা করে ওয়াসা বোর্ড। তাতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তাকসিম এ খান অংশ নেন।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের অনিয়ম, নিয়োগ-বাণিজ্য ও বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ লোপাট সম্পর্কে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঢাকা ওয়াসার লেনদেন-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র চেয়েছে দুদক। এসব বিষয়ে ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষুব্ধ ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের একটি অংশ।

আইন অনুযায়ী, ওয়াসার নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড। আর সাধারণ কার্য পরিচালনা করে ওয়াসা প্রশাসন। ওয়াসার আইন ১৯৯৬-এর-৬ ধারায় বোর্ড গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে। ওয়াসা বোর্ডে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ওয়াসার আওতাধীন এলাকার সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার প্রতিনিধিরা সদস্য হন। এই সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে সরকার চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদাধিকারবলে বোর্ড সদস্য হন।

ওয়াসার কর্মকর্তাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাকসিম এ খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এই বিষয়ে সংস্থাটির উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা মোস্তফা তারেক বলেন, ‘এই বিষয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমার নেই। প্রশাসনিকভাবে কেউ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন কী না, তা আমার জানা নেই।’

ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান ও সদস্যরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.