মতিউরের সম্পদের পাহাড়, অনুসন্ধানে দুদক

0
57
বসুন্ধরায় মতিউরের আলিশান বাড়ি, এছাড়া তার ছেলে ইফাত এমন অনেক বিলাসবহুল গাড়ির মালিক

ছেলের ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে জমা পড়া অভিযোগটি যাচাই করে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যেই দুদকের কর্মকর্তারা মাঠে নেমেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, এর আগে মতিউরের বিরুদ্ধে কমিশনে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছিল। তবে তাঁর তদবিরের চাপে প্রতিবারই তাঁকে ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, ওই সব অভিযোগ আর অনুসন্ধান করা হবে না। তবে এবার কমিশন অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, এবার অভিযোগটি কমিশনের ব্যাংক শাখা থেকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে মতিউর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দুদক সূত্র জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, জমি, ব্যবসা, শেয়ার ব্যবসা, ব্যাংকে নগদ অর্থ, মেয়াদি আমানতসহ সবকিছুই আছে তাঁর নামে।

মতিউর বর্তমানে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত কয়েক দিনে তাঁর ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় কোরবানির ছাগল, ৭০ লাখ টাকায় কয়েকটি গরু কেনার ছবি ও খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মতিউর বলেছেন, ইফাত তাঁর ছেলে নয়। পরে জানা গেছে, ইফাত তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় মতিউরের নামে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ রয়েছে। তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। এ দম্পতির মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতা ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা রয়েছে।

জানা গেছে, মতিউর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙিয়ে অবাধে দুর্নীতি করে আসছেন। সব মিলিয়ে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাঁর নামে-বেনামে ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৪০ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। দুর্নীতি-সংক্রান্ত ঝামেলা এড়ানোর জন্য স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদ রেখেছেন তিনি।

দুদক সূত্রে মতিউর রহমানের নামে-বেনামে আরও সম্পদের তথ্য জানা গেছে। বসুন্ধরার ডি ব্লকের ১ নম্বর রোডে পাঁচ কাঠা জমির ওপর সাততলা বাড়ি রয়েছে। এর মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় তিনি থাকেন। বাকি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া।

ময়মনসিংহের ভালুকার প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর তাঁর রপ্তানিমুখী জুতার কারখানা রয়েছে। এর নাম গ্লোবাল সুজ। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় মতিউরের রয়েছে বিপুল সম্পদ, প্লট ও বাগানবাড়ি। জেসিএক্স নামে একটি যৌথ ডেভেলপার কোম্পানি বসুন্ধরায় ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণকাজ করছে। এতে তাঁর মালিকানা রয়েছে। গাজীপুর সদরের খিলগাঁও মৌজায় বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তাঁর।

রাজধানীর অদূরে সাভার থানার বিরুলিয়া মৌজায় আটটি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ এবং একই মৌজায় স্ত্রীর নামে ১৪.০৩ শতাংশ জমি রয়েছে। গ্লোবাল সুজ কোম্পানির নামে সাতটি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। এর মূল্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা। এ ছাড়া তাদের নামে বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে বেশ কয়েকটি। দুদক সূত্র জানায়, এর বাইরে তাঁর আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

হকিকত জাহান হকি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.