মণিপুরে সহিংসতায় নিহত ৫৪

0
150
৪ মে চূড়াচাঁদপুর জেলায় অনেক বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, ছবি: এএনআই

ভারতের মণিপুর রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে কর্তৃপক্ষের ব্যাপক চেষ্টার মধ্যে গতকাল শুক্রবার রাতভর নতুন করে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। রাজ্যটিতে কয়েক দিন ধরে চলা সহিংসতায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু ৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে।

রাজ্য পুলিশ এএফপিকে জানায়, শুক্রবার রাতে নতুন করে সহিংসতার ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে দ্য প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া বলেছে, রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের হাসপাতালগুলোর মর্গে এবং আরও দক্ষিণে চূড়াচাঁদপুর জেলার হাসপাতালের মর্গগুলোতে মোট ৫৪টি মরদেহ এসেছে।

তবে নিরাপত্তা বাহিনী ও মণিপুর সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়নি।

কিন্তু ভারতের আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু সাংবাদিকদের শনিবার বলেন, কয়েক দিনে সহিংসতায় অনেক মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি সম্পদেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়, চূড়াচাঁদুপর জেলার হাসপাতালের মর্গে ১৬টি মরদেহ ও পূর্ব ইম্ফল জেলার জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে ১৫টি মরদেহ রয়েছে। পশ্চিম ইম্ফল জেলার লেমফেলের দ্য রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সে রয়েছে ২৩টি মরদেহ।

সার্বক্ষণিক কারফিউ থাকার কারণে রাস্তায় এখনো কোনো মানুষ নেই। শুধু পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া যানবাহন
সার্বক্ষণিক কারফিউ থাকার কারণে রাস্তায় এখনো কোনো মানুষ নেই। শুধু পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া যানবাহন, ছবি: এএনআই

মণিপুর রাজ্যের পুলিশের মহাপরিদর্শক পি ডুঞ্জেল গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনছে। সেনাবাহিনীও ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রাজ্যে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার কারণে রাজ্যটি থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই গতকালের সংঘর্ষের ঘটনাও হালকা-পাতলা জানা গেছে।

পার্শ্ববর্তী রাজ্য নাগাল্যান্ডের একটি সেনা ইউনিট জানায়, মণিপুর থেকে এই সেনা চত্বরে ১৩ হাজার মানুষ আশ্রয় চেয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরের সমতলের বাসিন্দা মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কুকি এবং নাগা জনগোষ্ঠীর নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর বিরোধ চলছে। মেইতেই সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি তফসিলি উপজাতিদের তালিকাভুক্ত হওয়া। সম্প্রতি হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিভুক্তদের তালিকায় আনা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন। এরপরই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য।

হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে গত বুধবার চূড়াচাঁদপুর জেলার তোরবাঙে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন মণিপুর’ (এটিএসইউএম) ‘আদিবাসী সংহতি পদযাত্রা’র ডাক দেয়। সেখান থেকে সহিংসতার সূত্রপাত। বুধবার রাতেই নিয়ন্ত্রিত ইম্ফল পশ্চিম, কাকচিং, থৌবাল, জিরিবাম ও বিষ্ণুপুর জেলা এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তানিয়ন্ত্রিত চূড়াচাঁদপুর, কাংপোকপি ও তেংনুপাল জেলায় কারফিউ জারি করা হয়। একই সঙ্গে রাজ্যে মুঠোফোন ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমন কি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে ‘দেখামাত্র গুলি’র নির্দেশ জারি করেন রাজ্যপাল অনুসূয়া উইকে। এ নির্দেশে বলা হয়, চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে, যখন আর কোনো উপায় কাজে আসবে না, সেই সময় দেখামাত্র গুলি চালানো যেতে পারে।

সহিংসতা বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লিতে থাকা মণিপুরের বাসিন্দারা। যন্তর মন্তর, নয়াদিল্লি, ৬ মে
সহিংসতা বন্ধ করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লিতে থাকা মণিপুরের বাসিন্দারা। যন্তর মন্তর, নয়াদিল্লি, ৬ মে, ছবি: এএনআই

গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীরা শহরের কয়েকটি অংশে যানবাহন ও বাড়িঘরে আগুন দিলে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।

সার্বক্ষণিক কারফিউ থাকার কারণে রাস্তায় এখনো কোনো মানুষ নেই। শুধু পড়ে আছে পোড়া যানবাহন। প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা শুক্রবার জানিয়েছেন, সড়ক ও আকাশপথে রাজ্যে অতিরিক্ত সেনা আনা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.