ঠিক এই সময়ে এসে ইনস্ট্রুমেন্টাল অ্যালবাম করার কথা কেন ভাবলেন?
আমি শুধু গান গাই, তা নয়। আমি একজন ক্রিয়েটরও। গান বানাই, মিউজিক করি, আবহসংগীত করি—সবকিছু মিলে কয়েকটা পরিচয়। আমার মনে হয়, ইনস্ট্রুমেন্টাল মিউজিকে একজন শিল্পীর ভেতরকার সত্তাকে খুঁজে পাওয়া যায়। এখানে যেহেতু কোনো শব্দ থাকে না, শুধু মিউজিকটা থাকে—শিল্পীর নিজস্ব ভাবনাকে প্রকাশের সবচেয়ে বড় একটা মাধ্যম ইনস্ট্রুমেন্টাল। শব্দ বা বাক্য দিলে তো সবার সামনে একটা চিত্র চলে আসে। যখন কোনো একটা ট্র্যাকে শব্দ থাকে না, শুধু ইনস্ট্রুমেন্ট থাকে, সেখানে চিন্তাভাবনার জায়গা অনেক প্রশস্ত হয়। সেই ভাবনা ও চিন্তার জায়গা থেকে মনে হয়েছে, আমার এখন যে বয়স, যে সময়—এই সময়ে সেই ভাবনার প্রকাশটা জরুরি। সেই ভাবনা থেকে আসলে ইনস্ট্রুমেন্টাল অ্যালবাম নিয়ে ভাবনা।
বিচ্ছিন্নভাবে ইনস্ট্রুমেন্টাল প্রকাশ করলেও অ্যালবাম তো এবারই প্রথম?
হ্যাঁ। আমি বিচ্ছিন্নভাবে সাত-আটটি ইনস্ট্রুমেন্টাল প্রকাশ করেছি। তার মধ্যে সর্বশেষ জানি না কোন মন্তরে অ্যালবামে ‘বাটারফ্লাই’ নামে একটা ইনস্ট্রুমেন্টাল ছিল। পুরো অ্যালবাম করার ভাবনাটা এবারই প্রথম।
‘রাগাস্কেপ’ প্রকাশের পর আপনার ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো।’ কেন?
(হাসি)। কারণ, এই সময়ে সেই অর্থে হয়তো মানুষ গানই শোনেন না। কতটুকু শোনেন, সেটাও একটা বড় প্রশ্নের জায়গায় চলে এসেছে। ঠিক সেই সময়ে ইনস্ট্রুমেন্টাল অ্যালবাম করাটা তো ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতোই ব্যাপার। তারপরও করছি। মনে হয়েছে, আমার ভাবনাটা প্রকাশিত হওয়া দরকার।
আপনার এই যাত্রাপথে সঙ্গী হিসেবে কারা আছেন?
তানিম, ডানোসহ দলছুটের অন্য সব সদস্য সোহেল আজিজ, মাসুম সবাই আছে। তিন বছরের প্রচেষ্টার পর আমার ‘রাগাস্কেপ’ প্রকাশিত হয়েছে।
দ্বিতীয়টা কবে আসবে?
ইনফ্যাক্ট দ্বিতীয়টার কাজ চলছে। ১৫ দিনের মধ্যেই প্রকাশিত হবে। বাকিগুলোও ১৫ দিন পরপর ছাড়ার ইচ্ছা। এটাও বলে রাখি, ইনস্ট্রুমেন্টাল নিয়ে আমি কথা বলেছি চারজন নারী শিল্পীর সঙ্গে—এলিটা, কোনাল, কনা ও আরমীন। তাদের সঙ্গে মৌখিকভাবে আলাপ হয়েছে, তারাও ভীষণ আগ্রহী। আমিও আসলে তাদের এই ইনস্ট্রুমেন্টাল প্রজেক্টে চাই।
এ মাসের শুরুর দিকে ফেসবুক পোস্টে বলেছিলেন, সস্তা ও গার্বেজ গানের সঙ্গে যুদ্ধ করার একমাত্র উপায় প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড ও একক শিল্পী যাঁরা আছেন, তাঁদের অতীব জরুরি ভিত্তিতে নতুন গান নিয়ে আসা।
যে অবস্থান থেকে আমার এই কথা বলা, তা হচ্ছে—ভালো গান কিন্তু হচ্ছে। অনেক ভালো গান হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, এই ভালো গানের বিপরীতে এত অসংখ্য, অশ্রাব্য, অগ্রহণযোগ্য গান, কাজ, কনটেন্ট আসছে যে এগুলো এসব ভালো গানকে ছাপিয়ে যাচ্ছে! ভালো গানকে ওসব কনটেন্ট সামনে আসতে দিচ্ছে না। সেটার বিরুদ্ধে একমাত্র যুদ্ধ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত ও ভালো মানের শিল্পীদের বেশি বেশি গান করা। যদিও অর্থনৈতিকভাবে বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং। তারপরও এটা সবার বিবেচনার মধ্যে আনাটা জরুরি। তাই তো আমি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি নতুন গান তৈরির ব্যাপারে।
আপনার কাছে কী মনে হয়, অভিমান থেকে প্রতিষ্ঠিত ও গুণী শিল্পীরা দূরে সরে আছেন, নাকি অন্য কোনো কারণ?
অভিমান থাকতেই পারে। অভিমান থাকার যথেষ্ট কারণও আছে। সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা বড় বিষয়, সবাই তো গান তৈরি করেন না। যাঁরা মূলত গানের শিল্পী, তাঁরা তো আসলে গান ক্রিয়েট করেন না। গানটা শুধু তাঁরা গাইছেন। কিন্তু গান গাওয়ার আগে গানটা বানাতে হবে। বানানোর ক্ষেত্রে কিছু অর্থনৈতিক ব্যাপার চলে আসে। আমরা সেটা নিয়েও ভাবতে পারি। ভাবার সে সুযোগ আমাদের আছে।
আপনার আবহসংগীতে গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’। এই ছবির টাইটেল গান ‘লিডার’ গেয়েছেনও আপনি। কেমন সাড়া পেয়েছেন?
আনফরচুনেটলি এই গান থেকে যে প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলাম, সেভাবে তা দৃশ্যমান হয়নি। এই ছবির অন্যান্য গান যেভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, কোনো একটা কারণে আমার মনে হয়েছে, ‘লিডার’ গানটির প্রচার সেভাবে হয়নি। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। কারণ, এই ছবির অন্যান্য গানকে যেভাবে পুশ করা হয়েছে, সে তুলনায় আমার গানের ক্ষেত্রে তা হয়নি। প্রচারণাটা কম হয়েছে। আমি এটা নিয়ে কাউকে কিছুই বলিনি। আমার উপলব্ধির কথাটা এই প্রথম কাউকে জানালাম। তবে যাঁরাই গানটি শুনেছেন, দারুণ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একইভাবে এ–ও বলেছেন, গানটার প্রচারণা আরও ভালো হওয়া উচিত ছিল।
এ নিয়ে মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমায় দ্বিতীয়বার কাজ করলেন। অভিজ্ঞতা কেমন?
সত্তা ছবিতে প্রথম করেছিলাম। অভিজ্ঞতা একেবারে ভিন্নধর্মী। সো কলড বাণিজ্যিক ছবিতে একেবারে কম কাজ করা হয়েছে। আমারও আসলে অনেক শেখার জায়গা ছিল। অনেক কিছু শিখেছি। শেখাটাও তো কন্টিনিউয়াস প্রক্রিয়া।
আর কোনো ছবিতে কাজ করছেন কি?
‘বীরকন্যা’ প্রীতিলতা মুক্তি পেয়েছে। ‘নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়’ ছবিতেও দুটো গানের কাজ করেছি। একটি আমি নিজে গেয়েছিও। মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের নতুন ছবির আবহসংগীতের কাজ করব।