ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং দেশটির নির্বাচন কমিশন ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে জোর চেষ্টা চালালেও তা বিফলে গেছে। শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় ভোটার উপস্থিতি আরও কমেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদির শাসনের ওপর এক ধরনের অনাস্থা থেকেই তার সমর্থকরা কেন্দ্রবিমুখ হচ্ছে।
গত ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকায় দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। প্রথম দফায় ভোটের হার বেশি ছিল না। ভোট পড়েছিল ৬৩ শতাংশ। দ্বিতীয় দফায় যাতে বেশি মানুষ ভোট দিতে আসে, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত আবেদন জানিয়েছেন। তবে দ্বিতীয় দফায় ভোট পড়েছে আরও কম। গতকাল ৬১ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানায় ইন্ডিয়া টুডে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৭ শতাংশ।
গতকাল শুক্রবার ১৩টি রাজ্যের ৮৮টি নির্বাচনী আসনে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। মহারাষ্ট্র, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশে দ্বিতীয় দফায়ও আশানুরূপ ভোট পড়েনি। বিজেপি শাসিত এই চার রাজ্যে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫২ থেকে ৫৪ শতাংশ। কর্ণাটক ও কেরালায় ভোট পড়েছে ৬৪ শতাংশের মতো। রাজস্থানে ওই সময় পর্যন্ত ভোটের হার ৬০ শতাংশেরও কম। প্রায় ৭২ শতাংশ ভোট পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে; আসামে ৭১ শতাংশের কিছুটা কম। সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে মণিপুর ও ত্রিপুরায়– ৭৬ শতাংশ। ছত্তিশগড়ে ভোট পড়েছে ৭২ শতাংশ। জম্মু-কাশ্মীরের জম্মু কেন্দ্রে বেলা ৩টা পর্যন্ত ভোটের হার ৬৭ শতাংশের বেশি।
গতকাল যেসব আসনে ভোট চলেছে, তার মধ্যে ৫৫টি এখন বিজেপির দখলে। কংগ্রেসের হাতে আছে ২০টি আসন। বাকিগুলো ছোট দল এবং নির্দলদের দখলে। বিজেপির দখলে থাকা আসনগুলোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তিন আসন দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট রয়েছে। এ দফায় মোট ভোটারের সংখ্যা সাড়ে ১৫ কোটির বেশি। এর মধ্যে আট কোটির বেশি পুরুষ ভোটার; নারী ভোটারের সংখ্যা সাড়ে সাত কোটির বেশি।
অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকার তিন জেলা করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি এবং কাছাড়ে মুসলমান সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই ভোট ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পাওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা নেই। সে কারণেই গতকাল দ্বিতীয় দফায় তারা যাতে ভোট দিতে না পারে, সে জন্য ভারতীয় রেল একাধিক ট্রেন বাতিল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আসামের নাগরিক সমাজের একাংশ এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দল মুসলমানপ্রধান অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) অভিযোগ করেছে, লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোট দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মূলত মুসলমান পরিযায়ী শ্রমিক বরাক উপত্যকায় নিজেদের বাড়িতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ একাধিক ট্রেন বাতিল করে তাদের আটকানোর চেষ্টা করছে, যাতে তারা ভোট দিতে না পারে।
এদিকে নির্বাচনে ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। ভোট গণনার পুরোনো ব্যালট পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার আবেদনের বিপক্ষে দুই বিচারপতি-বেঞ্চ গতকাল এ রায় দিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচন শুরুর কয়েক দিন পর এমন রায় এলো।
রায়ে বলা হয়, এ ব্যবস্থার যে কোনো দিক নিয়ে অন্ধ আলোচনা অযৌক্তিক সংশয় সৃষ্টি করতে এবং অগ্রগতিতে বাধা দিতে পারে। তার চেয়ে বরং সিস্টেমের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে প্রমাণ এবং যুক্তির মাধ্যমে একটি গঠনমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত; বলেন তিনি। ২০০০ সাল থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে আসছে ভারত। সম্প্রতি এর স্বচ্ছতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।