ভারত বর্জনের ডাক পাকিস্তানের, কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে আইসিসির

0
20
ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ মানেই ক্রিকেটপ্রেমীদের বাড়তি উন্মাদনা, ছবি: এএফপি

রাজনৈতিক বৈরিতায় ১৬ বছর ধরে পাকিস্তান সফরে যায় না ভারত ক্রিকেট দল। পাকিস্তানে ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। আইসিসি ই-মেইলের মাধ্যমে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে (পিসিবি) ভারতের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়েও দিয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ টেস্ট খেলুড়ে প্রায় সব দল নির্বিঘ্নে পাকিস্তানে গিয়ে খেললেও নিরাপত্তা শঙ্কাকে কারণ দেখিয়ে বারবার দেশটিতে দল পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে ভারত। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের এমন স্বেচ্ছাচারিতায় এবার পাকিস্তান সরকারও কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপিসহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পাকিস্তান সরকার বারবার বলে এসেছে, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের স্বার্থে রাজনীতিকে খেলাধুলার সঙ্গে মেশানো উচিত নয়। কিন্তু ভারত সরকার সেই কথা কানে না নেওয়ায় দেশটির বিপক্ষে খেলার ব্যাপারে বিধিনিষেধ জারি করার কথা ভাবছে পাকিস্তান সরকার।

ভবিষ্যতে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ আর নাও দেখা যেতে পারে
ভবিষ্যতে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ আর নাও দেখা যেতে পারে, ছবি: রয়টার্স

সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পিসিবিও ভারতের বিপক্ষে কোনো ধরনের ম্যাচ না খেলা ও ভবিষ্যতে ভারতে দল না পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। এক কথায়, ভারত বর্জনের ডাক দিতে যাচ্ছে পাকিস্তান।

২০২৫ থেকে ২০৩১—এই সাত বছরে ভারতে আইসিসির চারটি বড় ইভেন্ট হওয়ার কথা। ২০২৫ মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০২৯ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ২০৩১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এই চার টুর্নামেন্ট খেলতে পাকিস্তান দল যদি ভারতে না যায় অথবা টুর্নামেন্ট সরিয়ে নিয়ে যদি অন্য কোথাও আয়োজন করা হয়; কিন্তু পাকিস্তান তাতেও ভারতের বিপক্ষে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে অর্থনৈতিক দিক থেকে বড় লোকশানের মুখে পড়বে আইসিসি।

সব দিক দিয়ে লাভবান হওয়ার আশায় আইসিসি অনেকটা ঘোষণা দিয়ে ভারত–পাকিস্তানকে তাদের যেকোনো টুর্নামেন্টে একই গ্রুপে রাখে। কিন্তু ভবিষ্যতে পাকিস্তান যদি ভারতে খেলতে না যায় অথবা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কট করে, তাহলে দর্শকদের আগ্রহ কমে যেতে পারে। এতে সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান ও পৃষ্ঠপোষকেরাও মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে, যা আইসিসির প্রত্যাশিত রাজস্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সম্প্রচারস্বত্ব ও পৃষ্ঠপোষক—এই দুই খাত থেকে আইসিসি সবচেয়ে বেশি আয় করে থাকে। ২০২৪ থেকে ২০২৭ চক্রে সম্প্রচারস্বত্ব থেকেই আইসিসির ৩২০ কোটি ডলার (৩৮ হাজার ২৫৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা) আসার কথা। এই সময়ে অন্যান্য খাত থেকে সংস্থাটি আরও ১০০ কোটি ডলার (১১ হাজার ৯৫৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা) প্রত্যাশা করছে। আইসিসির বিপুল পরিমাণ আয়ের বড় উৎস ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ, যা ধারাবাহিকভাবে রেকর্ড দর্শক নিয়ে আসে এবং ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ তুঙ্গে নিয়ে যায়।

ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ না হলে আইসিসি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে
ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ না হলে আইসিসি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেছবি: আইসিসি

আইসিসি ইভেন্টে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে ব্যাপারে একটি সূত্র বলেছে, ‘ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ না হলে সব ধরনের সম্প্রচার ও পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান চুক্তি থেকে সরে আসবে।’

আহমেদাবাদে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচটি ঘিরে অভূতপূর্ব আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোয় খেলা দেখেছেন ১৭ কোটি ৩০ লাখ দর্শক, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দর্শক ছিল আরও বেশি, ২২ কোটি ৫০ লাখ। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ডিজনি প্লাস হটস্টার তো দাবি করেছিল, তাদের প্ল্যাটফর্মে সরাসরি খেলা দেখায় সবচেয়ে বেশি দর্শকের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ।

টিভিতে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ উপভোগ করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা
টিভিতে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ উপভোগ করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা, ছবি: এএফপি

আইসিসির আয় কমে গেলে তা বিশ্ব ক্রিকেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেট বোর্ডগুলোকে রাজস্ব বণ্টনের হার কমে যাবে, যা বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.