ভারত-চীনের উদ্বেগ সামলানোর চ্যালেঞ্জে নেপাল

0
133
শরণার্থী কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বালকৃষ্ণ খন্ড

নেপালে শরণার্থী কেলেঙ্কারিতে জড়িত দেশটির বেশ কয়েকজন সাবেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে তদন্ত জোরালো করেছে দেশটির পুলিশ। এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বুধবার দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বালকৃষ্ণ খন্ডকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- ভুটান থেকে শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণ নেপালিদের কাছ থেকে তিনি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনায় এরই মধ্যে তার ছেলেকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। খবর-সাউথ চায়না মর্নিং

এদিকে এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় নিরাপত্তাসহ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে এখন ভারত ও চীনের উদ্বেগ সামলানোর চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে নেপাল। কারণ হিমালয়ের এই দেশটিতে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে উভয় দেশ। শরণার্থী কেলেঙ্কারি তদন্তে দেশটির কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় নেপালের সঙ্গে চীনও ভারতের সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

ঘটনাটি নেপালের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ফেলে দিয়েছে অস্বস্তিতে। নিজ দেশের সীমানার বাইরে এর প্রভাব এসে পড়ে চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কেও। যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি সংবেদনশীল মন্ত্রণালয় হিসেবে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে নেপালের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ নাথ পান্ডে বলেন, ভাবুন তো কি হবে যদি ভারত ও চীন বিশ্বাস করে যে নেপাল আর তাদের নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান করতে পারবে না? তিনি বলেন, এই কেলেঙ্কারিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক এবং আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্বকে ‘উন্মোচিত’ করেছে। তিনি কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেন, এখন আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামনে ভারত ও চীনের উদ্বেগ প্রশমিত করা আরও বড় চ্যালেঞ্জ।

নিজেদের প্রভাব মোকাবিলায় বেইজিং ও নয়াদিল্লি উভয় দেশই নেপালের অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। চীন ও নেপালের মধ্যে একটি আন্তঃসীমান্ত রেললাইন নির্মাণের প্রস্তাব চলছে। এছাড়া পর্যটন শহর পোখারাতেও অর্থায়ন করেছে চীন। এদিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালে চলতি মাসে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

শরণার্থী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি নিয়ে ৮০০ জনেরও বেশি ভুক্তভোগী বলেছেন- তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের জন্য ভুটানি আশ্রয়প্রার্থীদের নামে জাল নথি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তাদের। এর বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে একটি রাজনৈতিক-আমলাতান্ত্রিক চক্র। এভাবে তারা প্রতারিত হয়েছে।

এই কেলেঙ্কারির ঘটনাটি দেশটির প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালের জন্যও মাথাব্যথায় কারণ। কারণ বালকৃষ্ণ খণ্ডের দল নেপালি কংগ্রেস দেশটির প্রধান দলগুলোর মধ্যে একটি যা তার ক্ষমতাসীন জোটকে সমর্থন করে। নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে প্রধান মিত্র সিপিএন-ইউএমএল তার সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তার জোট সরকারে আছে বালকৃষ্ণ খণ্ডের দল।

কমপক্ষে ১২জনকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক এবং বর্তমান কর্মকর্তা এবং দালাল। দেশটিতে এই ধরনের মানবপাচারের ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলছে। তবে গত কয়েক মাস আগে  ভুক্তভোগীরা এ নিয়ে মুখ মুখলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।

এই কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের মধ্যে দেশটির সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী বাহাদুর রায়ামাঝির মতো শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তির নামও এসেছে যিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালে এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাজনৈতিক মিত্রদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না বলেও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মানব পাচারের বিরুদ্ধে এই অভিযান বন্ধ হবে না। কোনো চাপের সামনে আমি মাথা নত করব না।

নেপালি ভাষার অনেকের আবাসস্থল ভুটানে। কারণ ১৯৯০ এর দশকে জাতিগত নির্মূল অভিযানের পর হাজার হাজার নেপালি প্রতিবেশী দেশ ভুটানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল।

ভুটানে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের পরবর্তীতে নেপালের শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হয়েছিল। কাঠমান্ডু ও থিম্পুতে বেশ কয়েকটি প্রত্যাবাসন আলোচনাও হয়েছিল। তবে এ আলোচনার যখন কোনো সুফল মেলেনি তখন শরণার্থীরা অন্য দেশে বসতি স্থাপন শুরু করে। জাতিসংঘ-সমর্থিত চুক্তির অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশে শরণার্থী হিসেবে যেতে শুরু করে।

ইতিমধ্যে এই উদ্বাস্তুদের নিয়ে একটি প্রতিবেদনে সরকারি কর্মকর্তাদের কেলেঙ্কারির তথ্য আসে। ওই চক্র ভুটানের শরণার্থীদের বাদ দিয়ে শত শত নেপালি বাসিন্দাকে ছদ্মবেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর জন্য তাদের কাছ থেকে অর্থ নিতে থাকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.