সারা বিকেল বাড়ির উঠানে খেলাধুলা ও ছোটাছুটি করায় সন্ধ্যায় ক্ষুধা পেত পাঁচ বছর বয়সী ছাওদা জেনির। তাই রাত না নামতেই সে ভাত চাইতো মায়ের কাছে। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকেও তাকে ভাত মেখে খাওয়াচ্ছিলেন মা পাপিয়া আক্তার; নিজেও খাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ ঘরে ঢুকে মা-মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে রেখে যায় একদল দুর্বৃত্ত। ভাতের থালা তখনও বিছানার ওপর। আর্তচিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে দু’জনকে উদ্ধার করেন। এর কিছুক্ষণ পর মারা যায় জেনি। হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের এ ঘটনায় সাতজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত চারজনকে আসামিকে করে মামলা করেন পাপিয়ার ভাই আল-আমিন খলিফা।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই এজাহারনামীয় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন– ওই গ্রামের সামাদ হাওলাদারের ছেলে নেহারুল হাওলাদার (৪৮), মনির হাওলাদার (৪৫) ও মিলন হাওলাদার (৪০)। তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
পাপিয়া ও জেনির মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে আজ বিকেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
পাপিয়ার স্বামী আবু জাফর ঢাকায় একটি দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। এই দম্পতির বড় ছেলে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় থাকে। পাপিয়ার ভাইয়ের করা মামলায় আবু জাফরকেও আসামি করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তাঁর খোঁজ মিলছে না।
পাপিয়ার ছোট বোন সুমি আক্তারের দাবি, তাঁর বোনকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতেন মনির। কুপ্রস্তাবে রাজি না হলে পাপিয়াকে হত্যার হুমকি দিতেন তিনি। এজন্য তিনি ভয়ে থাকতেন। অনেক সময় নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে ঘুমাতেন পাপিয়া। মাঝেমধ্যে সুমিও তাঁর সঙ্গে থাকতেন।
সুমি বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে আমি বোনের বাড়িতেই ছিলাম। শুক্রবার সকালে আমাদের বাড়ি আসি। সেদিনই ওরা আমার বোনকে মেরে ফেলল।’
আবু জাফরের চাচা স্কুলশিক্ষক আবু তালেব বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মেয়ে জেনি দেখা হলেই বলত, চাচ্চু আমি তোমার সঙ্গে স্কুলে যাব। ওর আর স্কুলে যাওয়া হলো না। একটা শিশু খাওয়া অবস্থায়ও রক্ষা পেল না। মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কীভাবে!’
আবু তালেব দাবি করেন, মনিরের বিষয়টি তিনিও জানতেন। ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। কারণ এর আগেও মনির ও তার ভাইয়েরা এলাকার অনেক মানুষকে অন্যায়ভাবে মারধর করেছেন।
পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন আপন ভাই। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। পাপিয়ার সঙ্গে তাঁর স্বামীর কলহ ছিল বলে জানা গেছে। সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।