বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ আজ

0
49

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ সোমবার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি অনুযায়ী, দুপুর ২টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে জমায়েত হবে তারা। এজন্য সারাদেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন সমন্বয়করা। গতকাল রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সংবাদকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেওয়া এক বার্তায় এ আহ্বান জানান।

আসিফ মাহমুদ বার্তায় বলেন, “পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট করা হলো। সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, ‘আজ যে তাজা রক্ত ঝরালেন। এই রক্তের ভয়াবহ শোধ নিতে ঢাকায় আসছে সারাদেশের জনস্রোত। ঢাকায় ১ কোটি ছাত্র-জনতার সম্মিলন ঘটবে ইনশাআল্লাহ। যে যেভাবে পারেন, রাতেই ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করুন। ঢাকার আকাশ-বাতাস ধ্বনিত হবে স্বৈরাচার পতনের স্লোগানে।’

যারা ঢাকায় আসতে পারবেন না, তাদের স্থানীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে রক্ষা করার নির্দেশনা দিয়েছেন সমন্বয়করা। আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ পৃথক বার্তায় বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় কায়দায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করে সেই দায়ভার ছাত্র-জনতার ওপর চাপাতে পারে। আমাদের পরিচয় হিন্দু-মুসলমান-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ নয়, আমাদের আসল পরিচয় হচ্ছে মানুষ। আমাদের আর দুটি পরিচয় নির্যাতক ও নির্যাতিত। আমাদের আন্দোলন নির্যাতকের বিরুদ্ধে।’

সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়নও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষার আহ্বান জানান। এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘স্থানীয় যারা ঢাকায় আসতে পারবেন না, তারা বিভিন্ন জেলায় আমাদের হিন্দু এবং সংখ্যালঘু ধর্মীয় ভাইবোনদের রক্ষা করার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন অবশ্যই। আমাদের আন্দোলন বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা এবং পরিকল্পনা চলছে। এত রক্ত ঝরার পর এই আন্দোলন কোনোভাবেই থামতে দেওয়া যাবে না। চলে আসুন ঢাকায়, সকল ভেদাভেদ ভুলে। বিজয় সুনিশ্চিত।’

আসিফ মাহমুদ বার্তায় আরও বলেন, ‘চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার সময় এসে গেছে। বিশেষ করে আশপাশের জেলা থেকে সবাই ঢাকায় আসবেন। ঢাকায় এসে রাজপথে অবস্থান নিন।’ গতকালই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জনতাকে জড়ো করে ঢাকার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ুন। এবারের লড়াই আমাদের চূড়ান্ত লড়াই।’

এদিকে গতকাল বিকেলে শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, গন্তব্য পরিষ্কার। বিজয় এবং একমাত্র বিজয়ই আমাদের লক্ষ্য। আমরা এখনও সময় দিচ্ছি, সরকার যদি এখনও সহিংসতা চালিয়ে যায়, আমরা কিন্তু গণভবনের দিকে তাকিয়ে আছি। আপনাকে ঠিক করতে হবে শেখ হাসিনা, আপনি কি এখনও সহিংসতা চালাবেন, রক্তপাত চালাবেন– নাকি ছাত্রদের দফা অনুযায়ী পদত্যাগ করবেন।’ আওয়ামী লীগ দেশে গৃহযুদ্ধ তৈরি করতে চায় অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সরাসরি মাঠে নেমেছে। দেশটা গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ছাত্র-জনতা যে কোনো মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত। আজ লাঠি তুলে নিয়েছি। যদি লাঠিতে কাজ না হয়, আমরা অস্ত্র তুলে নিতে প্রস্তুত। আপনারা প্রতিরোধ করুন, রুখে দাঁড়ান, সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশছাড়া করতে হবে।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আর যদি আমার ভাইদের বুকে গুলি করা হয়, আমার বোনদের কেউ আহত হন, আমরা বসে থাকব না। পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায়, অলিগলিতে প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন। যেখানেই হামলা হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’ এই সরকারকে না মানার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে দেশের নেতৃত্ব দেবে ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতার ঘোষণা চূড়ান্ত ঘোষণা। খুনি সরকারের বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে। শাহবাগে এসেছি, সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান জারি থাকবে।’ ইন্টারনেট বন্ধের ষড়যন্ত্র এবার কাজে লাগবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গতকাল রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উত্তরবঙ্গ হয়ে আসা ছাত্র-জনতা মহাখালীতে, সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও জনতা রামপুরা-বাড্ডায়, নারায়ণগঞ্জ হয়ে আসা ছাত্র-জনতা সায়েদাবাদে, মিরপুর ১০-এ আশেপাশের এলাকার ছাত্র-জনতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও জনতা শহীদ মিনারে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল রুট দিয়ে আসা ছাত্র-জনতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে, মোহাম্মদপুরে আশেপাশের এলাকার ছাত্র-জনতা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে আসা ছাত্র-জনতা গাবতলীতে অবস্থান নেবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.