বেরিয়ে আসছে ব্যাটারদের হতশ্রী চেহারা

0
136

একটু ভালো খেলা, জয় এবং স্বপ্নে বেঁচে থাকা; ক্রিকেটার, সমর্থক সবারই চাওয়া তাই। বিশ্বকাপ কখনও এই চাওয়ায় রং ছিটায়, কখনও ধূলিকণা। বাংলাদেশের স্বপ্নের রং যেমন ফিকে হতে শুরু করেছে পরাজয়ের ধুলাবালিতে। টানা দুই হারে নিম্নমুখী পয়েন্ট টেবিল। তিন ম্যাচ খেলে দুটিতেই পরাজিত টাইগার বাহিনী। চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের পর রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডের কাছেও জুটেছে বড় হার। গতকাল চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে কেন উইলিয়ামসন আর ড্যারেল মিচেলের পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।

আইপিএল খেলার সময় এই ভারত থেকে চোট নিয়ে সাত মাস আগে ক্রিকেট থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল কেন উইলিয়ামসনকে। হাঁটুর এসিএল লিগামেন্ট প্রতিস্থাপন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেন ভারত থেকেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে কেন দেখালেন তিনি এখনও অপ্রতিরোধ্য। রিটায়ার্ড হার্ট হতে না হলে আন্তর্জাতিক প্রত্যাবর্তনকে শতকে স্মরণীয় করে রাখতে পারতেন। হাতের আঙুলে বলের আঘাত তা হতে দেয়নি। ব্যথা নিয়ে ৭৮ রানে মাঠ থেকে স্বেচ্ছায় উঠে গেলেন অধিনায়ক। তিনি ছিটকে গেলেও নিউজিল্যান্ড ভালোভাবে টিকে থাকে ম্যাচে ড্যারেল মিচেলের দৃঢ়তায়। ছয়টি চার ও চার ছক্কায় ৬৭ বলে ৮৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ৪৩ বল হাতে রেখেই দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি।

পূর্বাভিজ্ঞতা থেকে অনুমান করা হচ্ছিল, চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের উইকেট হবে স্পিনস্বর্গ। বিশ্বাসের সে ভিত মজবুত করেছিল ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ। স্বাগতিকরা তিন স্পিনার নিয়ে খেলে সফল হয়েছিল। আশা করা হচ্ছিল, কিছুটা সুবিধা বাংলাদেশ দলের জন্যও থাকবে। এই দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়েছিল নিউজিল্যান্ড দলের ভেতরেও। কিন্তু হলো উল্টোটাই। চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে উপহার দিল স্পোর্টিং উইকেট। যেখানে পেস বোলারদের প্রভাব ছিল বেশি। নিউজিল্যান্ডের তিন ফাস্ট বোলার ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি ও লকি ফার্গুসন পেলেন সাতটি উইকেট। বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের পেছনেও ছিল এ পেসত্রয়ীর হাত। যদিও সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিছুটা ক্ষত সারাতে পেরেছিলেন। ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২৪৫ রানও করেছিল বাংলাদেশ। বোলিং-ফিল্ডিং নিখুঁত হলে অন্যরকম কিছু হতে পারত। মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলামরা ভালো শুরু পেলেও ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি। ফলে ডেভন কনওয়ে, কেন উইলিয়ামসন, ড্যারেল মিচেলরা বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং দিয়ে জিতে নেন ম্যাচ।

 

বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভালো ব্যাটিং করছে না। বৃহস্পতিবার ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন হলে সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর পরামর্শ ছিল ওপেনিং জুটির কথা ভুলে যাওয়ার। তিনি ক্ষোভ না ঠাট্টাচ্ছলে তা বলেছিলেন, জানা নেই। যে অর্থেই বলেন না কেন, ওপেনিং জুটিকে ভুলে যেতেই হচ্ছে। ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে পারফরম্যান্সের অতলান্তে ডুব দিচ্ছেন তারা। ১৯, ১৪ এর পর শূন্য রানে ওপেনিং জুটির বিচ্ছেদ। বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ হলো টাইগার দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও তানজিদ হাসান তামিমের। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে পরের সংবাদ সম্মেলনে কী বলেন এমন পারফরম্যান্সের পর, তা শোনার অপেক্ষায়।

গতকাল ছিল লিটনের ২৯তম জন্মদিন। স্মরণীয় করে রাখার সুবর্ণ সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। অথচ এমন দিনে কিনা গোল্ডেন ডাক মারেন তিনি। ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম বলে ফ্লিক করে বাউন্ডারি নিতে গিয়ে ক্যাচ হন ফাইন লেগে। খুশির দিনে নতশির ওপেনারের। এত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেও কেন এমন শট নির্বাচন? চেন্নাই ম্যাচ ভেন্যুতে থাকা মোহাম্মদ আশরাফুলকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, ‘সেট হয়ে খেলা উচিত ছিল।’ লিটনের ধরে খেলার ধৈর্য দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এর পরও আশা করা হচ্ছিল, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঝলমলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলার অভিজ্ঞতা ছন্দে রূপ দেবেন। তিনি করলেন উল্টোটা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আত্মঘাতী শট খেলে ব্যাটিং বিপর্যয়ের সূচনা করেন তিনি।

তামিম ইকবালের জায়গায় বিশ্বকাপ খেলতে আসা তানজিদ হাসান তামিমকে মনে করা হচ্ছে বিশ্বকাপ দলের ব্যাটিং লাইনআপের ‘লিকেজ’। সেটা সত্যি প্রমাণিত হতে শুরু করেছে টানা তিন ম্যাচের ব্যর্থতায়। ৫, ১ ও ১৬ রানে আউট তিনি। গৌহাটির দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে রান পাওয়ায় বিশ্বকাপে টানা ম্যাচ খেলার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তাঁকে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলে ভালো খেলা এ ব্যাটার আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রতিভার ছাপ রাখতে পারেননি এখনও। তিনি বরং দ্রুত আউট হয়ে নিজের কপাল পুড়ে দলের বিপদ ডেকে আনছেন। পাওয়ার প্লেতে ওপেনিং জুটির বিদায় ব্যাটিং বিপর্যয়ের সূত্রপাত। ৫৬ রানে চার উইকেটের পতন ছিল হতাশার।

কিউইদের বিপক্ষে বিপর্যস্ত ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব কাঁদে তুলে নিতে হয় পঞ্চম উইকেট জুটিকে। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম দেখেশুনে খেলে দারুণ এগোন। এ ক্ষেত্রে মুশফিক ছিলেন দুর্বার। কিউই বাঘা বোলারদের বলে বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চাপ কমান তিনি। সাকিবকে নিয়ে ১০৮ বলে ৯৬ রানের জুটির সঙ্গী ছিলেন। সাকিব তাড়াহুড়া না করলে রানের ধারায় বহমান থাকতে পারত জুটি। ৫১ বলে ৪০ রান করে আউট টাইগার দলপতি। এই রানে বিশ্বকাপে একটি মাইলফলকও পেলেন তিনি। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ১২০১ রান হলো তাঁর। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ক্রিস গেইলের রান ১১৮৬। বিরাট কোহলি বিশ্বকাপ খেলছেন ১১৭০ রানে। ভালো খেলতে খেলতে হেনরির একটি স্লোয়ার ডেলিভারিতে বোল্ড হন মুশফিক। ৭৫ বলে ৬৬ রান তাঁর। বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলেন তিনি। সাকিব-মুশফিকের অসম্পন্ন দায়িত্ব শেষ করেন পঞ্চপাণ্ডবের আরেক সদস্য মাহমুদউল্লাহ। ৪৯ বলে ৪১ রান করেন তিনি। এ তিন সিনিয়রের কল্যাণে ৯ উইকেটে ২৪৫ রান করে বাংলাদেশ। যেখানে সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লার রান ১৪৭। বাংলাদেশের শক্তি এখনও অভিজ্ঞতায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.