বেতন বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবিটা ১০ মাস আগে দিয়েছিল মেয়েরা। নেপালে নারী সাফ জেতার পর সাবিনা খাতুন-কৃষ্ণা রানী সরকারদের প্রস্তাবিত দাবিগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে নানা টালবাহানা করতে থাকেন বাফুফের কর্তারা। দাবি আদায় না হওয়ায় অনুশীলন পর্যন্ত বর্জন করেছিলেন সাবিনারা। গত মাসে নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলার পর পুরোনো দাবিগুলো নতুন করে লিখিত আকারে দিয়ে ছুটিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ নারী দল। যাওয়ার আগে ক্যাম্প বয়কটের হুমকিও নাকি দিয়েছিল তারা।
সব কিছু চিন্তা করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন মেয়েদের দাবি বাস্তবায়নে নানা অঙ্ক কষতে থাকে। অবশেষে কাটছাঁট করে মানা হচ্ছে সানজিদা-মারিয়া মান্ডাদের দাবি। আজ দুপুরে ফুটবল ফেডারেশনে নারী ফুটবলারদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি করতে যাচ্ছে বাফুফে। তাতে পরিবর্তন আসবে বেতন কাঠামোয়। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর অনুযায়ী সাবিনাদের চাওয়া মতো বেতন বেড়ে ৫০ হাজার হচ্ছে না। সর্বোচ্চ ৪০ এবং সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা হচ্ছে বেতন। আর এই বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি হতে যাচ্ছে ক্যাটাগরিভিত্তিক। অর্থাৎ ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ ক্যাটাগরিতে শুধু জাতীয় দলের ৩১ ফুটবলার বেতন পাবেন।
বেতন ভাতা বৃদ্ধি, পুরুষ ফুটবলারদের সমান সুযোগ-সুবিধা, পুষ্টিকর খাবার, উন্নত মানের সরঞ্জাম এবং বেশি বেশি ম্যাচ খেলার দাবি ছিল মেয়েদের। বাফুফের ক্যাম্পে থাকা মেয়েদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা বেতন পান সাবিনা। জাতীয় দলের বাকি সবার বেতন ১০ হাজার করে। ফেডারেশন সূত্র থেকে যতটুকু জানা গেছে, তাতে দ্বিগুণ বেতন বাড়ছে মেয়েদের।
নারী ফুটবল দলের দাবিগুলো নিয়ে গতকাল বাফুফেতে বৈঠক করেন কাজী সালাউদ্দিন, নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণসহ আরও অনেকে। সভায় সব কিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য, ‘মেয়েদের দাবিগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগামীকাল (বুধবার) আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। তবে দাবিগুলো পুরোপুরি পূরণ না হলেও আমরা চেষ্টা করেছি তাদের খুশি রাখতে।’
বেতন ছাড়াও আরও যে দাবি ছিল, সেগুলোও পূরণ হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানলেও বাফুফের এ উদ্যোগে সবাই খুশি বলে গতকাল জানান অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, ‘আমি এতটুকু বলতে পারি ফেডারেশন যা দিচ্ছে, তাতে প্লেয়াররা খুশি।’
নারী ফুটবলারদের সুযোগ-সুবিধা যেমন বাড়াতে যাচ্ছে বাফুফে, তেমনি নিজেদের স্বার্থও দেখবে তারা। তাই দাবি পূরণের সঙ্গে কোড অব কন্ডাক্টের আওতায় আনা হচ্ছে মেয়েদের। চুক্তিতে শর্তের অনেক বিষয়ই থাকবে– হঠাৎ করে অনুশীলন বয়কট করা যাবে না, যখন-তখন মিডিয়ায় কথা যাবে না আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ছুটিতে থাকার সময় অন্য কোথাও খেলা যাবে না।
গত জুলাইয়ে সাতক্ষীরায় সাবিনা খাতুনের ওয়ারিয়র্স স্পোর্টিংয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত লিগে বাফুফের অনুমতি ছাড়াই খেলেছিলেন মারিয়া মান্ডা, মাতসুশিমা সুমাইয়া, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, তহুরা খাতুন, রুপনা চাকমা, মার্জিয়া ও মাসুরা পারভীন। এবার তাদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হলেও এখন লিখিত আকারে উল্লেখ করা থাকবে অনুমতি ছাড়া কোথাও খেলা যাবে না। শর্ত ভাঙলে চুক্তি থেকে বাদ দেওয়ার সঙ্গে শাস্তির খড়্গও নেমে আসতে পারে সাবিনাদের ওপর।