কৃষকেরা যদি আধুনিক ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তাহলে অল্প পানিতে অনেক পাট পচানো সম্ভব।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় ১৫ দিন ধরে বৃষ্টি নেই। এ অবস্থায় এলাকার খাল-বিল, জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকেরা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে ওই পাটগাছ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকেরা যদি আধুনিক ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তাহলে অল্প পানিতে অনেক পাট পচানো সম্ভব হবে।
গত শনিবার উপজেলার কামারপুকুর, কাশিরাম বেলপুকুর, খাতামধুপুর, বোতলাগাড়ি ও বাঙালিপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টি না হওয়ায় জলাশয়গুলো শুকিয়ে গেছে। কিছু কিছু জমির পাট কেটে ফেলেছে কৃষকেরা। জাগ দেওয়ার পানি না পাওয়ায় তা এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কোনো কোনো কৃষক জমি থেকে কেটে নেওয়া পাটগাছ দূরে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন দূরের কোনো জলাশয়ের খোঁজে।
খাতামধুপুর ইউনিয়নের ময়দানপুর এলাকার কৃষক মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘ভাইয়া হামার এত্তি, পখর (পুকুর)-দীঘিত পানি নাই। তাই ভ্যানত করিয়া ভুইবাড়ি (খেত) হইতে পাটা কাটি ধরি যাওছু নাংটি ছেঁড়া নদীর গোরত। এই সময় পাটা ফেলে থুইলে তা নষ্ট হইবে বাহে। তখন খড়ি ছাড়া কোনো কাজত লাগিবে না।’
কামারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক আমিনুল জানান, এখন পাট কাটার মৌসুম চলছে। এসব পাট কেটে আবার সেই জমিতে আমনের চারা লাগাতে হবে। তাই জমি খালি করতে হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর জলাশয়ে পাট জাগ দেওয়ার মতো পানি নেই। তাই পাট কেটে জমির পাশে অথবা নদীর কাছে স্তূপ করে রাখতে হচ্ছে। সময়মতো এসব জাগ দিতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারীহাটের কৃষক সাইফুল বলেন, শ্রাবণ মাস চলছে, অথচ বৃষ্টির দেখা নেই। এ অবস্থায় চলতি আমন মৌসুমের চারাও লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর নিজস্ব শ্যালো মেশিন আছে। তাই এর সাহায্যে সেচ দিয়ে আমনের চারা লাগানো হচ্ছে।
কৃষকেরা বলছেন, পানি না পাওয়ায় তাঁদের দুই ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। পাট সময়মতো না পচালে গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। তখন তাঁরা পাটের ভালো দাম পাবেন না। অন্যদিকে, জমির পাট কেটে যে আমনের চারা লাগাবেন, তা–ও হচ্ছে না। সবার পক্ষে পানি কিনে জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মমতা সাহা জানান, পানিসংকটে রিবন রেটিং পদ্ধতি খুবই কার্যকর। এই পদ্ধতিতে ১০ লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয়। কাঁচা পাটগাছ থেকে ছাল বা বাকল আলাদা করার পর ওই ছাল বা বাকলকে যে পদ্ধতিতে অল্প পানিতে পচানো হয়, তাকে রিবন রেটিং বলা হয়। তবে এই পদ্ধতিতে কৃষকেরা অভ্যস্ত নন। তাঁরা প্রচারণা চালাবেন।