দিনভর এমন ভারী বৃষ্টি রাজধানীবাসী অনেক দিন দেখেনি। তা–ও একেবারে কোরবানির ঈদের দিন থেকে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে আকাশ গোমড়া করে থাকা মেঘ জানান দিচ্ছিল, যেকোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে। বেলা তিনটা থেকে যখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামল, তখন আর থামার জো নেই। গতকালের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এমন ভারী বৃষ্টি টানা আরও এক সপ্তাহ চলতে পারে। মাঝেমধ্যে বিরতি দিলেও প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও অল্প সময়ের জন্য হলেও বৃষ্টি হতে পারে।
সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বৃষ্টি বাড়তে থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। টানা বৃষ্টি চললে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি চলে আসতে পারে। তবে এ থেকে বড় বন্যার কোনো আশঙ্কা দেখছেন না বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা।
স্বস্তি এনে দেওয়া এই বৃষ্টি ঢাকা শহরের জন্য আরেকটি উপকার করে দিয়ে গেছে। তা হচ্ছে কোরবানির পশুর বর্জ্য একেবারে ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়ে গেছে। ঈদের দিন কোরবানির পশুর রক্ত আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে এক অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিশেষ করে রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার অলিগলিতে দীর্ঘ সময় ধরে ওই বর্জ্য ও রক্তযুক্ত পানি জমে থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মৌসুমি বায়ু বেশ সক্রিয় রয়েছে। যে কারণে বৃষ্টি বেড়ে গেছে। আগামী এক সপ্তাহ তা একই রকম থাকতে পারে। ফলে বৃষ্টি আগামী এক সপ্তাহ একইভাবে ঝরতে পারে।
এদিকে বৃষ্টি ও মেঘ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। গরমের অনুভূতি কমে গিয়ে কিছুটা স্বস্তির আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। জুলাই মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে এ ধরনের আবহাওয়া থাকতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদেরা। কারণ হিসেবে মৌসুমি বায়ু শক্তি অর্জন করায় সারা দেশের ওপর সক্রিয় আছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। যে কারণে দেশের বেশির ভাগ এলাকার আকাশে মেঘ ও থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরছে। ফলে তাপমাত্রা দ্রুত কমে আসছে।
ধানমন্ডির সড়কে জলযট
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, মূলত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে। ওই বায়ুর সঙ্গে আসা প্রচুর জলীয় বাষ্পের কারণে সারা দেশে বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে জুলাই-আগস্ট মাসকে দেশের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল মাস বলা হয়। এবার মৌসুমি বায়ু একটু দেরিতে, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের এক সপ্তাহ পর বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে বৃষ্টি দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে শুরু হওয়ার পর থেকে অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার বৃষ্টি বেশ জোরেশোরে নেমেছে। মাসের বাকি সময়জুড়ে একই ধারায় বৃষ্টি চলতে পারে বলে মনে করেছেন আবহাওয়াবিদেরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গতকাল দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি ঝরেছে সিলেটে ৯৯ মিলিমিটার। গতকাল সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীতে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। মেঘ ও বৃষ্টির কারণে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে ৯৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর মেঘের কারণে সূর্যের দেখা খুব বেশি পাওয়া যায়নি। ফলে দিনভর তাপমাত্রা ছিল বেশ কম, আরামদায়ক।
রাজধানীতে জলাবদ্ধতা
গতকালের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিকেলের দিকে বৃষ্টি কমে এলেও ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, ঢাকা কলেজের সামনের সড়ক, জিগাতলা, পুরান ঢাকার বংশাল, নর্থ সাউথ রোড, আগা সাদেক রোড, কাজী আলাউদ্দিন রোড, পূর্ব জুরাইন, মেরুল বাড্ডার ডিআইটি আবাসিক এলাকা, নয়াপল্টন, নিউমার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কে রাতেও পানি ছিল।
মিরপুর এলাকা থেকে রাত আটটার দিকে একজন বাসিন্দা জানান, কাজীপাড়া থেকে মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত সড়কটিতে প্রচুর গাড়ি পানির কারণে বিকল হয়ে রয়েছে। তীব্র যানজট রয়েছে সেখানে।
ধানমন্ডি এলাকার ট্রাফিক পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল রাতে মুঠোফোনে বলেন, ফাঁকা ঢাকায় বৃষ্টির কারণে নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি এলাকায় ব্যাপক যানজট হয়েছিল। রাত আটটার দিকেও মূল সড়কে পানি ছিল। তাই যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে।