বিশ্বের সব সংগীতশিল্পীর কাছেই কাঙ্ক্ষিত ও মর্যাদাসম্পন্ন আয়োজন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস। যুক্তরাষ্ট্রের লসঅ্যাঞ্জেলসের ক্রিপ্টো ডটকম এরেনায় ৫ ফেব্রুয়ারি (বাংলাদেশ সময় ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল) বসেছিল এর ৬৫তম আসর। বাংলাদেশ থেকে এখানে হাজির হয়েছিলেন সংগীতশিল্পী জেফার রহমান। গ্র্যামির অভিজ্ঞতাই বলেছেন তিনি
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। দিনটি ছিল অন্য রকম। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্রিপ্টো ডটকম অ্যারেনায় অনুষ্ঠেয় সংগীত দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আয়োজন গ্র্যামির আসরে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। জমকালো পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আমি একা নই, সঙ্গে ছিল আমার কাছের বন্ধু সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী প্রীতম হাসান। বন্ধু যখন পাশে থাকে, তখন প্রিয় মুহূর্তগুলো আরও আনন্দময় হয়।
দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠানে আমাদের সুন্দর সময় কেটেছে। দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে গ্র্যামি পুরস্কার দিয়ে আসছে আমেরিকান রেকর্ডিং একাডেমি। এ রকম একটি আসরে যোগ দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়েছে। কারণ, এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য সবারই অনেক অপেক্ষা থাকে। ছোটবেলা থেকেই মুগ্ধতা নিয়ে গ্র্যামির অনেক আয়োজন দেখতাম টিভিতে। আর মনে মনে স্বপ্ন বুনতাম, একদিন হয়তো আমি যাব ওই আসরে। সেই স্বপ্নই এবার পূরণ হলো। অনুষ্ঠানে দেখেছি বিশ্বসংগীতের মহাতারকাদের, উপভোগ করেছি অবিস্মরণীয় এক সন্ধ্যা। তাঁদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা এখনও চোখে লেগে আছে।
মজার ব্যাপার হলো, কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই আমি ও প্রীতম দু’জন আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার জন্য আবেদন করি। হঠাৎ করেই আমাদের গ্র্যামিতে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব পাঠায় ‘কাইনেটিক মিউজিক’। তখন দু’জনে অবাক হয়েছি। হ্যারি স্টাইলস, বিয়ন্সে, টেইলর সুইফট, কার্ডি বি, কেন্ড্রিক লামার, ম্যাডোনা, ডোয়াইন জনসন, অ্যাডেল- এ রকম নামিদামি তারকা আমাদের থেকে অল্প দূরত্বে ছিলেন! যাঁদের দেখে আমরা উৎসাহ পেয়ে আসছি, তাঁদের সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
উপভোগ করেছি তাঁদের পারফরম্যান্স। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করা একটি বড় বিষয়। আমরা দু’জনে আমাদের সংস্কৃতিকে সেখানে তুলে ধরেছি। অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চার হয়েছে, যা আমাদের আগামীকে কাজে উৎসাহ জোগাবে। গ্র্যামির মূল আসর ছাড়াও অনুষ্ঠানকে ঘিরে ছিল আরও কিছু আয়োজন। চেষ্টা করেছি সেগুলো ঘুরে দেখতে। গ্র্যামিতে অংশগ্রহণের আনন্দময় কিছু মুহূর্ত সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছি বন্ধুদের জন্য। এ ধরনের আয়োজনে যোগ দেওয়ায় কাছের মানুষের অনেকেই বেশ খুশি হয়েছেন।
এবারের গ্র্যামির মঞ্চে অবিশ্বাস্য একটি ঘটনার সাক্ষী ছিলাম। এ আসনে বিয়ন্সে নোলস জিতে নিলেন আরও চারটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। সঙ্গে গড়লেন নতুন ইতিহাস, যার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি গ্র্যামিজয়ী হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখালেন এই মার্কিন গায়িকা-অভিনেত্রী। আমি যদি ভুল না করে থাকি এ নিয়ে ক্যারিয়ারে মোট ৩২টি গ্র্যামি জিতলেন এই সংগীত তারকা। এর আগে প্রয়াত সংগীত পরিচালক জর্জ সলতি ৩১ বার গ্র্যামি পুরস্কার পেয়েছেন। এ আসরে প্রথমবার বাংলাদেশি একজন শিল্পীও মনোনয়ন পেয়েছিলেন। যদিও তিনি পুরস্কার জেতেননি। এ আসরে মনোনয়নের তালিকায় থাকাটাও বড় ব্যাপার। আশা করি, একদিন আমাদের বাংলাদেশি কোনো শিল্পীও গ্র্যামির লালগালিচায় পা মাড়াবেন। সবশেষে গ্র্যামির আসরে প্রীতম ও আমাকে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করার জন্য কাইনেটিক মিউজিককে আবারও ধন্যবাদ দিতে চাই। এ প্রতিষ্ঠানটির কল্যাণে গ্র্যামির মতো আসরে যাবার সুযোগ হয়েছিল।