সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। জর্ডানে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের ওপর ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়া এবং লোহিত সাগরে হুতি বিদ্রোহীদের হামলা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে।
সোমবার রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, হুতি বিদ্রোহীরা সিঙ্গাপুরভিত্তিক ট্রাফিগুরা পরিচালিত একটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি রাশিয়ার কয়েকটি তেল পরিশোধনাগারে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কারণে দেশটির পরিশোধিত তেল রপ্তানি কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি পরিশোধনাগার এখনও মেরামত করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ সকালে বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ২৯ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৮৩ দশমিক ৮৪ ডলারের উঠেছে। অন্যদিকে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআইয়ের দাম ৩৪ সেন্ট বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৮ দশমিক ৩৫ ডলারে উঠেছে।
খবরে আরও বলা হয়েছে, জর্ডানে মার্কিন সেনাদের ওপর ড্রোন হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিনিয়োগ ব্যাংক আরবিসি ক্যাপিটালের বিশ্লেষক হেলিমা ক্রফট বলেছেন, ধারণা করা হচ্ছে, জর্ডানে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনার মৃত্যুর জেরে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি আরও বাড়বে। এ ছাড়া ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সংঘাতের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে পারে।
সিরিয়া সীমান্তের কাছে উত্তর-পূর্ব জর্ডানে গত রাতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের তিন সৈনিক নিহত হন। এ ছাড়া আরও অনেকে গুরুতর জখম হয়েছেন। এই হামলায় নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, পশ্চিম এশিয়ায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটাই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সবচেয়ে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ট্রাফিগুরার তেলবাহী ট্যাংকারে হুতিদের হামলায় লেগে যাওয়া আগুন নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হলেও তারা এখন লোহিত সাগর পথে জাহাজ চালানোর আগে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখবে বলে জানিয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজে হামলার আশঙ্কা থাকায় বাজারে প্রভাব পড়বে। তেল সরবরাহ নিয়ে আশঙ্কার পাশাপাশি মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক খবর ও চীনের প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে দেশটির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তেলের দাম বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
তেলের বাজার নিয়ে যে একধরনের আত্মতুষ্টির মনোভাব ছিল; অর্থাৎ দাম খুব একটা বাড়বে না, তা হারিয়ে গেছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষণকারী সংস্থা আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সিকামোর।
এদিকে রাশিয়ার পরিশোধনাগারে ড্রোন হামলার জেরে দেশটির পেট্রোকেমিক্যাল নাপথার সরবরাহ দৈনিক ১ লাখ ৭ হাজার ৫০০ ব্যারেল থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার ব্যারেল কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে মিলিত হবে। তবে এপ্রিল–পরবর্তী সময়ের উৎপাদন নিয়ে এই বৈঠকে তেমন সিদ্ধান্ত না–ও হতে পারে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে আরও কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।