বিলম্ব হতে পারে খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রায়

0
12
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া

গুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে কয়েক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল। অবশেষে তাঁকে লন্ডনে নেওয়া হচ্ছে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে আজ শুক্রবার সেই যাত্রা হতে পারে।

তবে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ‘কারিগরি সমস্যা’ দেখা দেওয়ায় যাত্রা বিলম্বিত হতে পারে বলে জানা গেছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে জানান, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত। অর্থাৎ, আগে যা ছিল, সে অবস্থাতেই আছেন।’ তিনি বলেন, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে “টেকনিক্যাল সমস্যা”র কথা জানিয়েছে কাতার। তারা বিকল্প কিছু করার চিন্তা করছে। সেটা তারা আমাদের জানাবে। সে ক্ষেত্রে ভোরে যাত্রা হচ্ছে না, এটি দিনের যেকোনো সময়ে হতে পারে। তবে বিষয়টি কিছুটা অনিশ্চয়তায় পড়েছে।’

এদিকে চিকিৎসার জন্য শাশুড়িকে লন্ডনে নিতে বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ঢাকায় আসছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে বাসসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার পরে জুবাইদা রহমানের ফ্লাইট লন্ডন ছেড়েছে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান লন্ডন থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান লন্ডন থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন, ছবি: বাসস

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সরাসরি লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটটির আজ শুক্রবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তিনি শাশুড়ির সঙ্গে একই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে ফিরতে পারেন। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের লন্ডন যাত্রা বিলম্বিত হতে পারে। সেটি সন্ধ্যা নাগাদ গড়াতে পারে বলে সিভিল এভিয়েশন ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে এগুলো নির্ভর করবে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা এবং মেডিকেল বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামতের ওপর।

বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত যেভাবে

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে, গতকাল বিকেলে এ সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এরপর বিএনপির নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে এই ভেবে যে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় আছেন। তাঁর সংকটাপন্ন অবস্থা নিয়ে কিছুদিন ধরে সারা দেশে নানা রকম আলোচনা চলছে। বিশেষ করে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার মতো পর্যায়ে রয়েছেন কি না বা তিনি দীর্ঘ বিমান যাত্রাপথের শারীরিক চাপ নেওয়ার মতো অবস্থায় আছেন কি না—এ প্রশ্নগুলো সব মহলে আলোচিত হচ্ছিল।

সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে গতকাল বিকেলে বিএনপি নেতা ও চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার ভোরে খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে হাসপাতালের কাছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) হেলিকপ্টারের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন ও অবতরণ। গতকাল দুপুরে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে হাসপাতালের কাছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) হেলিকপ্টারের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন ও অবতরণ। গতকাল দুপুরে

জাহিদ হোসেন বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এবং খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে তাঁকে কাতার রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনের একটি নির্ধারিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কিছু চিন্তা করা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গতকাল তিনবার ভার্চ্যুয়ালি সভা হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও চীনের চিকিৎসকেরা সশরীর দেখেছেন। তিনি জানান, বিমানে যাতে যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যে তাঁকে সুস্থভাবে চিকিৎসা দেওয়া যায়, সেই লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

পরে গুলশানে দলের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একই তথ্য জানান। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ‍্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাবে, শুক্রবার ভোরে লন্ডন যাত্রা করবে।

১২ দিন ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।

অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে বুধবার রাতে চীন থেকে দেশটির চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঢাকায় আসেন। এর আগে এ দিন দুপুরে যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় আসেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বেলে। রাতেই এই চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়ার সর্বশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো দেখেন এবং মেডিকেল বোর্ডে যোগ দেন।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটা কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে হৃদ্‌যন্ত্রে জটিলতাও কিছুটা কমেছে। তবে বাকি সমস্যাগুলো অনেকটাই অপরিবর্তিত।

অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গত ২৯ নভেম্বর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এই মুহূর্তে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার মতো তাঁর শারীরিক অবস্থা নেই। এর পাঁচ দিনের মাথায় তাঁকে লন্ডন নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানা গেল।

উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারি মাসে লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে প্রথমে হাসপাতালে, পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নেন। প্রায় চার মাস পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। দেশে ফিরেও তিনি বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

হাসপাতাল ও বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, কাতার আমিরের রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছার পর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়াকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত নেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে একজন মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসার জন্য আধুনিক সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জামের সুবিধা রয়েছে।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, এসএসএফের কর্মকর্তা, পরিবারের সদস্য ও গৃহকর্মীসহ ১৭ জন থাকবেন। তাঁরা হলেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শামিলা রহমান, চিকিৎসক রিচার্ড বেলে, মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকি, নূরউদ্দিন আহমদ, মো. জাফর ইকবাল ও মোহাম্মদ আল মামুন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, সৈয়দ সামিন মাহফুজ, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহকারী মো. আবদুল হাই মল্লিক, সহকারী ব্যক্তিগত সচিব মো. মাসুদুর রহমান, জিয়াউল হক, গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও গৃহকর্মী রূপা শিকদার।

গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।

এদিকে খালেদা জিয়াকে দেখতে গতকাল হাসপাতালে যান বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুজ্জমান সিদ্দিকী, আইজিপি বাহারুল আলম ও ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

হাসপাতাল থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে, নাকি হেলিকপ্টারে করে নেওয়া হবে, তা কোনো পক্ষ নিশ্চিত করে বলেনি। যদিও গতকাল দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালের নিকটবর্তী দুটি মাঠে সেনা ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের পরীক্ষামূলক অবতরণ ও উড্ডয়নের মহড়া হয়েছে। এটি খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নেওয়ার প্রাক্‌-প্রস্তুতির অংশ কি না, জানা যায়নি। লন্ডনে পৌঁছার পর বিমানবন্দরে মাকে নিতে তারেক রহমান উপস্থিত থাকবেন। এরপর তিনি মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.