গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এদের মধ্যে রয়েছেন বিপিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী।
রোববার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডির অভিযানে গ্রেপ্তার অপর ১৬ জন হলেন—পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফর, উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, পিএসসির অবসরপ্রাপ্ত গাড়ির চালক সৈয়দ আবেদ আলী, ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, নোমান সিদ্দিকি, আবু সোলায়মান মো. সোহেল, জাহিদুল ইসলাম, মামুনুর রশীদ, সাখাওয়াত হোসেন, সায়েম হোসেন, লিটন সরকার, সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তাকর্মী শাহাদাত হোসেন ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান নিয়ামুন হাসান।
এদিকে সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আবেদ আলীর গ্রামের বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে তাঁর কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। ডাসার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে আলোচনাতেও আসেন তিনি। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ফ্লাটসহ রয়েছে একাধিক ভবন, সরকারি জমি দখল করে তৈরি করেছেন গরুর খামার। কুয়াকাটায় তৈরি করেছেন হোটেল সান মরিনা নামে একটি বিলাসবহুল হোটেল। তার ছেলেও চড়েন কোটি টাকার গাড়িতে। পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। নামে বে-নামে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার জমি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির দালালী করে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
জানা যায়, মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত জবেদ আলী মীরের ছেলে সৈয়দ আবেদ আলী জীবন সরকারি গাড়িচালক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন। চাকরি জীবনের প্রথম পর্যায়ে কষ্টে দিন কাটলেও সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িয়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান তিনি।
সরকারি দপ্তরের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন আলোচনায় আসেন বিপিএসসি’র প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য হিসেবে। এরপর কয়েক বছর গাঁ ঢাকা দিয়ে থাকলেও ডাসার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে ফের আলোচনায় আসেন তিনি। ডাসার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অসহায় মানুষদের মন জয় করতে অর্থ দান শুরু করেন। নিজের ও তার ছেলের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে প্রমাণ করতেন নিজেকে।
সম্প্রতি সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে গরুর ফার্ম তৈরি করেন আবেদ আলী। যদিও সড়ক বিভাগ সে স্থাপনাটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তিনি সেই নির্দেশ অমান্য করেন এবং স্থাপনাটি অপসারণ করেননি।
দেশের বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে সেই ছবি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দেখিয়ে সুবিধা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে আবেদ আলীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার পর আত্মগোপনে থাকায় ও মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পিএসসি থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রসঙ্গে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে। অনিয়মের প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেবে পিএসসি।